ইস্ট লন্ডনে দুই বেডরুমের এক ঘরে আগুন লেগে একজনের মৃত্যু হয় তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য এই ঘরে ১৮ জন লোক বসবাস করতেন।
এই ঘরের রান্নাঘরের মেঝেতেও লোকেরা ঘুমাতো এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন এই ফ্ল্যাটে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা বসবাস করতো। ভাড়াটেরা প্রতি সপ্তাহে ১০০ পাউন্ড রেন্ট হিসাবে প্রদান করতো বলে খবরে জানা যায়।
গত ৫ মার্চ ভোরে টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিলের একটি বাসায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ধারনা করা হচ্ছে একটি ত্রুটিযুক্ত ই-বাইকের ব্যাটারি দ্বারা আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। যারা এই ঘরে বসবাস করতেন তারা কোনরকমে রক্ষা পেলেও মিজানুর রহমান গুরুতরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত ও ঝলসে যান। দমকলকর্মীরা পরবর্তীতে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
যুক্তরাজ্যের হাউজিং সংস্থা শেল্টার এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে একটি “ভয়াবহ কেস” হিসাবে বর্ণনা করে। ১৭ জন যারা বেঁচে গেছেন তাদের বেশিরভাগের পাসপোর্ট ও দরকারী কাগজপত্র জ্বলে গিয়েছে। তারা বর্তমানে গৃহহীন হয়ে পড়ায় কাউন্সিলের পক্ষ হতে তাদের একটি হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এই ১৭ জনের বেশিরভাগেরই ইংল্যান্ডে কোন আত্মীয়স্বজন নেই এবং তাদের মধ্যে ১০ জনের পাবলিক ফান্ড গ্রহণ করার কোনো অনুমতিও নেই।
সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে, ফ্ল্যাটটি ইংল্যান্ডে ৭৩২০০০ বাড়ির মধ্যে একটি যেখানে লোকেরা গাদাগাদি করে বসবাস করে। শ্বেতাঙ্গ ভাড়াটেদের তুলনায় সংখ্যালঘু জাতিগত ভাড়াটেরা গাদাগাদির শিকার বেশি হয়।
২০২১ সালের আদমশুমারি থেকে জানা গেছে যে টাওয়ার হ্যামলেটের পাঁচটি পরিবারের মধ্যে একটিতে বেশি গাদাগাদি করে লোকজন বসবাস করে । বাসিন্দারা বারবার কাউন্সিলকে অতিরিক্ত গাদাগাদি নিয়ে সতর্ক করেছিল বলে জানা যায় কিন্তু কাউন্সিল এই ব্যাপারে কর্ণপাত করে নাই।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন, “আমরা এই দূর্ঘটনার পরে দ্রুত তদন্তের ব্যবস্থা করেছি। পরিদর্শন সম্পন্ন হয়েছে। আবাসন আইনে একটি ফৌজদারি তদন্ত বর্তমানে চলছে”। তিনি যোগ করেন, এটা মর্মস্পর্শী যে মিজানুর রহমান তার জীবন হারিয়েছে এবং আমাদের সহমর্মিতা রয়েছে তার পরিবার এবং বন্ধুদের জন্য।
শেল্টারের প্রধান নির্বাহী পলি নিয়েট বলেছেন, বিপজ্জনক আবাসন দ্বারা কারও জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া উচিত নয়। প্রকৃতপক্ষে সাশ্রয়ী মূল্যের বাড়ির দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতির ফলস্বরূপ এই ভয়াবহ
ঘটনার সুত্রপাত। তবে ফৌজদারি তদন্তে কেন এই অগ্নিকাণ্ড ঘটলো তা অবশ্যই বেরিয়ে আসবে।
তিনি সমস্ত বাড়িওয়ালাদের একটি জাতীয় রেজিস্টারের অধীনে আনার আহ্বান জানিয়েছেন যাতে প্রতিটি বাড়িওয়ালাকে নজরদারিতে রাখা যায়। কাউন্সিলগুলিকে সক্রিয়ভাবে বাড়িগুলি পরিদর্শন করতে এবং বসবাসকারীরা নিরাপদ রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করার অনুরোধ করেছেন।
উল্লেখ্য যে টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিলে প্রায় ৩৮০০০ বেসরকারী ভাড়া দেওয়া সম্পত্তি রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ১৫০০০ কাউন্সিল দ্বারা স্বীকৃতিপ্রাপ্ত।
এম.কে
১৫ মার্চ ২০২৩