সিডনির বন্ডাই সমুদ্রসৈকতে ইহুদি সম্প্রদায়ের একটি উৎসবে বন্দুকধারীদের হামলার পর অস্ট্রেলিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা আরও বেড়েছে। হামলার ঘটনায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে কড়া ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানালে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন করে আলোচনায় আসে।
হামলার পর সোমবার ঐক্যের আহ্বান জানান অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ। ২০২৩ সাল থেকে দেশটিতে ইহুদিবিদ্বেষ বাড়লেও অস্ট্রেলিয়া সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি—নেতানিয়াহুর এমন অভিযোগের পরপরই তিনি বলেন, ঘৃণা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে যেকোনো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তার সরকার প্রস্তুত।
এক সংবাদ সম্মেলনে আলবানিজ ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, সহিংসতায় উসকানি ও ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্যকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, নাৎসি ঘরানার প্রতীক ও ভাস্কর্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং ইহুদি সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা জোরদারে সরকারি তহবিল বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ায় বন্দুক ব্যবহারের আইন আরও কঠোর করার কথাও বলেন তিনি।
২০২১ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ায় ইহুদি পরিচয়ে বসবাস করেন প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৬৭ জন, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র দশমিক ৪৬ শতাংশ। তাদের বড় অংশ সিডনি ও মেলবোর্নে বসবাস করে। বন্ডাই সৈকতে হামলার পর এসব এলাকায় বসবাসকারী অনেক ইহুদি নাগরিক নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে গত সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয় অস্ট্রেলিয়া। সে সময় নেতানিয়াহু সরকার এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে। একই সঙ্গে ২০২৩ সাল থেকে গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে নিউ সাউথ ওয়েলস প্রদেশে নিয়মিত বিক্ষোভ সমাবেশ করার অনুমতি দিয়ে আসছে স্থানীয় পুলিশ।
দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা সবচেয়ে চরমে ওঠে গত আগস্টে, যখন ইসরায়েলের দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অস্ট্রেলীয় কূটনীতিকদের ভিসা বাতিল করে নেতানিয়াহু সরকার। এর প্রতিক্রিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং বলেন, এটি ইসরায়েলের অন্যায্য পদক্ষেপ এবং ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিশোধ হিসেবেই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বন্ডাই হামলাকে ঘিরে অস্ট্রেলিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও বিতর্ক শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির তুলনামূলক শিথিল অভিবাসন নীতির কারণেই এ ধরনের হামলা ঘটেছে—এমন অভিযোগ তুলেছে রক্ষণশীল দলগুলো। তারা বড়দিনের আগেই নতুন ও কঠোর অভিবাসন নীতি প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী টনি বার্কি। তিনি জানান, বন্দুকধারীদের একজন ২৪ বছর বয়সী তরুণ অস্ট্রেলিয়াতেই জন্মগ্রহণ করেছে এবং অপর একজনের বাবা ১৯৯৮ সালে দেশটিতে অভিবাসী হিসেবে এসেছিলেন। তিনি আরও বলেন, হামলার সময় ঘটনাস্থলে যে ব্যক্তি এক বন্দুকধারীকে আটক করেন, তিনিও একজন অভিবাসী—সিরিয়া থেকে আসা মুসলমান নাগরিক আহমেদ আল আহমেদ।
এই ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় ইহুদিবিদ্বেষ, অভিবাসননীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা—এই তিনটি বিষয়ই নতুন করে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে।
সূত্রঃ রয়টার্স
এম.কে

