উড়োজাহাজের জ্বালানি জেট এ-১ ফুয়েলের মজুদ দেশে যা আছে, তা আগামীকালই শেষ হয়ে যাবে। আজকের মধ্যে জেট ফুয়েল নিয়ে জাহাজ না এলে উড়োজাহাজে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া ছাড়া কোনো উপায়ই থাকবে না বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি)। মূলত বিদেশী প্রতিষ্ঠানের বকেয়া পরিশোধ করতে না পারায় সরবরাহ কমানো এবং শিপমেন্ট পিছিয়ে দেয়ার পর বাতিলের ঘটনায় এ সংকট তৈরি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে সর্বশেষ ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেট ফুয়েলের মজুদ ছিল ১৭ হাজার ৭০০ টন। প্রতিদিন চাহিদা রয়েছে ১ হাজার ৫০৮ টনের মতো। সে হিসাবে আগামীকালের মধ্যেই মজুদ পৌঁছবে শূন্যের কোটায় (ডেডস্টক অর্থাৎ ট্যাংকে রাখা জরুরি সর্বনিম্ন জ্বালানি বাদে)। বিপিসি অবশ্য বলছে, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিপেকের একটি চালান আজ দেশে পৌঁছার কথা রয়েছে। ওই জ্বালানি ৩০ ডিসেম্বর বিমানবন্দরগুলোয় সরবরাহ করা সম্ভব হবে। তবে চালানটি পৌঁছতে একদিন বিলম্ব করলেও দেশে উড়োজাহাজে জ্বালানি দেয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে হবে বিপিসিকে।
আবার পদ্মা অয়েলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে জেট এ-১-এর মজুদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামীকাল। সিঙ্গাপুর থেকে জ্বালানি নিয়ে ইউনিপেকের জাহাজ পৌঁছার দুদিন পর সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এমনটা হলে অন্তত দুদিন জেট ফুয়েলের ঘাটতি তৈরি হবে দেশে।
দেশে চাহিদা পূরণে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে বিপিসি। পরিশোধিত বিভিন্ন গ্রেডের জ্বালানি তেলের মধ্যে ডিজেলের সিংহভাগ এবং জেট এ-১-এর শতভাগই আমদানি করে রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থা। তাদের কাছে জ্বালানি তেল সরবরাহকারী ছয়টি বিদেশী প্রতিষ্ঠানের পাওনা রয়েছে ২৯ কোটি ৫৯ লাখ ৬০ হাজার ডলার। দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া থাকা সে অর্থ পরিশোধে তাগাদা দিলেও দেশে ডলার সংকট থাকায় বিপিসি দিতে পারছে না। এমনকি এসব বকেয়ায় সোনালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের দায় থাকায় এসব ব্যাংকের নতুন এলসিও গ্রহণ করছে না সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এ কারণে চলতি মাসে বেশ কয়েকটি জ্বালানির চালান কয়েক দফায় পিছিয়েও দেয়া তারা। তাই জ্বালানি মজুদ ফুরিয়ে আসায় এবং আগাম জ্বালানি বুকিংয়ের জন্য রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিপিসি।
তথ্যমতে, সিঙ্গাপুরভিত্তিক ভিটল এশিয়া ও চীনা প্রতিষ্ঠান জায়ান্ট ইউনিপেক বিপিসির কাছে ৪ কোটি ২৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার, ভিটল ১০ কোটি ৫ লাখ ৮ হাজার, এমিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (ইএনওসি) ১ কোটি ৪৪ লাখ, পিটি বুমি শিয়াক পুসাকো (বিএসপি) ৭ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার, পিটিএলসিএল ৪ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার ও পেট্রো চায়না পাবে ১ কোটি ৫২ লাখ ৮০ হাজার ডলার। জ্বালানি সরবরাহের পরও দীর্ঘদিন বকেয়া পরিশোধ না করায় নতুন করে ঋণপত্র খুলতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংক জনতা, অগ্রণী ও সোনালী। এর মধ্যে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো জনতা ব্যাংকের কাছে পাবে ৭ কোটি ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার, অগ্রণী ব্যাংকের কাছে ১২ কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার ও সোনালী ব্যাংকের কাছে ৯ কোটি ৮৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার।
বর্তমান সংকট উত্তরণে প্রতিদিন ৬-৭ কোটি ডলার বকেয়া পরিশোধ ছাড়া অন্য উপায় নেই বলে জানিয়েছে বিপিসি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে প্রতিষ্ঠানটির বিপণন ও অপারেশন বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের কাছে যে পরিমাণ জেট এ-১ ফুয়েল রয়েছে তা ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, ২৯ ডিসেম্বর দেশে জাহাজ পৌঁছলে পদ্মা অয়েলের ডিপোয় জ্বালানি আসতে আরো কয়েক দিন সময় লেগে যেতে পারে। তাতে দেশে জেট ফুয়েলের সরবরাহ চেইন বজায় রাখার কোনো সুযোগই থাকছে না।’
সূত্রঃ বণিক বার্তা
এম.কে
২৮ ডিসেম্বর ২০২৩