TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

এনএইচএস ইংল্যান্ড বিলুপ্তির ঘোষণা দিলেন স্যার কেয়ার স্টারমার

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমার ঘোষণা করেছেন এনএইচএস ইংল্যান্ড বিলুপ্ত করা হবে, যাতে সামনের সারির (ফ্রন্টলাইন) স্বাস্থ্যসেবা খাতে বেশি অর্থ ব্যয় করা যায় এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার উপর গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যায়।

সরকার পরিচালিত এই স্বতন্ত্র সংস্থাটি বিলুপ্তির মাধ্যমে প্রশাসনিক জটিলতা কমানো এবং ব্যয় হ্রাস করা হবে। সরকারের মতে, এই উদ্যোগের ফলে ৯,০০০-এর বেশি কর্মসংস্থান বিলুপ্ত হবে, তবে এতে বছরে শত শত মিলিয়ন পাউন্ড সঞ্চয় হবে, যা রোগীদের জন্য প্রতীক্ষার সময় কমাতে ব্যয় করা হবে।

ইয়র্কশায়ারে দেওয়া এক বক্তৃতায় স্যার কেয়ার বলেন:

“আমরা রাষ্ট্রীয় স্তরে আমলাতান্ত্রিক ব্যয় কমাবো, সরকারকে সাধারণ জনগণের প্রয়োজনের দিকে আরও মনোযোগী করবো এবং বাজেটের বড় অংশ সরাসরি স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় করবো। এনএইচএস পরিচালনার দায়িত্ব পুনরায় গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা এটি বিলুপ্ত করছি।”

তিনি আরও বলেন:

“এতে এনএইচএস আবার সরকারের নিয়ন্ত্রণে ফিরে আসবে, রোগীদের সেবা দেওয়াই হবে মূল লক্ষ্য। কমবে আমলাতান্ত্রিক ব্যয়, নার্সদের জন্য থাকবে বেশি অর্থ এবং হাসপাতালের রোগীদের প্রতীক্ষার সময় কমানো হবে।”

যুক্তরাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এনএইচএস ইংল্যান্ড স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আসবে।

এই পরিকল্পনার আওতায় এনএইচএস ইংল্যান্ড, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় নির্বাহী সংস্থা হিসেবে পরিচিত, সেটিকে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য ও সামাজিক কল্যাণ দফতরের (Department of Health and Social Care) অধীনে আনা হবে।

এই সিদ্ধান্তের আগে এনএইচএস ইংল্যান্ডের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তাই পদত্যাগ করেছেন, যার মধ্যে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) এবং জাতীয় মেডিক্যাল পরিচালকও রয়েছেন।

স্যার কেয়ার স্টারমার বলেন, এনএইচএস ইংল্যান্ডের প্রশাসনিক পুনরাবৃত্তি (duplication) স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে তুলেছে।

তিনি ব্যাখ্যা করেন:

“বিশ্বাস করুন বা না করুন, এনএইচএস ইংল্যান্ডের নিজস্ব একটি যোগাযোগ (কমিউনিকেশন) টিম আছে, আবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েরও একটি যোগাযোগ টিম আছে। একইভাবে, এনএইচএস ইংল্যান্ডের একটি কৌশলগত (স্ট্র্যাটেজি) টিম আছে, আর সরকারেও একই ধরনের টিম আছে। আমরা একই কাজ দু’বার করছি! এই অব্যবস্থা বন্ধ করলে আমরা সেই অর্থ সরাসরি রোগীদের সেবায় ব্যয় করতে পারবো।”

যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীরা এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছেন বলে জানা যায়। স্বাস্থ্যসচিব ওয়েস স্ট্রিটিং এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে:

“২০১২ সালে কনজারভেটিভ সরকারের এনএইচএস পুনর্গঠন ছিল ব্যর্থ প্রয়াস। এটি ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এনএইচএস, যেখানে অপেক্ষার সময় দীর্ঘতম ছিল এবং রোগীদের সন্তুষ্টির হার ছিল সবচেয়ে কম। অর্থনৈতিক সংকটের এই সময়ে, একই কাজের জন্য দুটি সংস্থা রাখা যুক্তিযুক্ত নয়। আমাদের দরকার বেশি কর্মী, কম আমলা।”

এনএইচএস ইংল্যান্ডের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান নির্বাহী স্যার জেমস ম্যাকি জানান, যদিও এই ঘোষণা কর্মীদের জন্য উদ্বেগজনক, তবে এটি প্রয়োজনীয় পরিবর্তন।

তিনি বলেন:

“আমরা জানি, এই সিদ্ধান্ত আমাদের কর্মীদের জন্য অস্বস্তিকর। তবে এটি আমাদের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেবে এবং সরকার যে রোগীদের কল্যাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে, সেটিও নিশ্চিত করবে।”

বর্তমানে ১৫,৩০০ কর্মী এনএইচএস ইংল্যান্ডে এবং ৩,৩০০ জন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন। এই বিলুপ্তির কাজ অবিলম্বে শুরু হবে, তবে পুরো প্রক্রিয়াটি প্রায় দুই বছর সময় নিতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমার সতর্ক করে বলেছেন যে এনএইচএস ইংল্যান্ড বিলুপ্তিই একমাত্র কঠিন সিদ্ধান্ত নয়।

তিনি বলেন:

“এটি শুধু শুরু। কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। আমাদের লক্ষ্য জাতীয় নিরাপত্তা, দেশীয় সংস্কার ও প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা।”

তিনি সরকারি কর্মচারীদেরও সমর্থন করে বলেন সমস্যা তাদের মানসিকতা বা দক্ষতায় নয়, বরং প্রশাসনিক জটিলতায়।

লেবার পার্টির বাজেট পরিকল্পনা নিয়ে ব্যবসায়িক মহলের সমালোচনার প্রেক্ষিতে, প্রধানমন্ত্রী নতুন ব্যবসায়িক নীতি ঘোষণা করেছেন।

তিনি বলেন:

“আমরা ব্যবসায়িক বিধিনিষেধ (compliance cost) ২৫% কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। এটি বাস্তবায়ন করা হবে। কম আমলাতন্ত্র, বেশি কর্মসংস্থান – এটাই আমাদের লক্ষ্য।”

তবে হেলথ ফাউন্ডেশন থিঙ্ক ট্যাংকের নীতিনির্ধারক হিউ অলডারউইক সতর্ক করে বলেছেন:

“ইতিহাস বলে, এনএইচএস ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন সাধারণত বেশি ঝামেলা তৈরি করে এবং প্রত্যাশিত সুফল খুব কমই আনে। এই সিদ্ধান্তের ফলে ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে, যা স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করার পরিবর্তে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।”

এনএইচএস ইংল্যান্ড কনজারভেটিভ সরকারের আমলেই গঠিত হয়েছিল। তবে এখন এর বিলুপ্তির ঘোষণায় তারা সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

কনজারভেটিভ দলের নেতা আলেক্স বার্গহার্ট বলেছেন:

“আমরা এনএইচএস ব্যবস্থাপনায় সরলীকরণ আনতে চাই। তবে এখন এনএইচএসের কার্যকারিতা নিয়ে লেবার সরকারের আর কাউকে দোষারোপ করার সুযোগ থাকবে না।”

সম্প্রতি এনএইচএস ইংল্যান্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের ঢল নেমেছে।

প্রফেসর স্যার স্টিফেন পাওয়িস, এনএইচএস ইংল্যান্ডের জাতীয় মেডিক্যাল পরিচালক, এই বছরে পদত্যাগ করবেন।

এনএইচএস ইংল্যান্ডের সিইও অ্যামান্ডা প্রিচার্ডও অপ্রত্যাশিতভাবে পদত্যাগ করেছেন।

এনএইচএস ইংল্যান্ডের বিলুপ্তি যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এর মাধ্যমে খরচ কমানো, আমলাতন্ত্র হ্রাস করা ও স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তবে বাস্তবে এটি কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সূত্রঃ দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট

এম.কে
১৩ মার্চ ২০২৫

আরো পড়ুন

ব্রিটিশ মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে বাংলাদেশের শিপব্রেকার শ্রমিকরা

যুক্তরাজ্যে দ্রুততম গতিতে বাড়ছে দ্রব্যমূল্য, বাড়তে পারে সুদের হারও

অনলাইন ডেস্ক

বিলেতে বাড়ি বেচাকেনা: প্রোপার্টি সার্ভে

নিউজ ডেস্ক