বাংলাদেশের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অভ্যন্তরে নতুন করে বিভাজনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ছাত্রনেতাদের দাবি অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি কোনো ধরনের “নিরাপদ প্রস্থান” খুঁজছেন না।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমি কোনো প্রস্থান চাই না। আমি আমার জীবনের বাকি সময় বাংলাদেশেই কাটাতে চাই।” তার এই বক্তব্য এসেছে ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)–এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের মন্তব্যের পর, যেখানে তিনি দাবি করেছিলেন যে সরকারের কিছু উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন।
নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, “আমরা অনেক উপদেষ্টার ওপর ভরসা করেছিলাম, কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এখন তারা নিজেদের নিরাপদ প্রস্থান খুঁজছেন।” তিনি কোনো উপদেষ্টার নাম উল্লেখ না করলেও তার মন্তব্য ঘিরে ইউনুস প্রশাসনের ভেতরে অস্থিরতা ও জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে।
পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়, যখন মঙ্গলবার এনসিপির আরেক নেতা সারজিস আলম বলেন, “উপদেষ্টাদের জন্য একমাত্র প্রস্থান হলো মৃত্যু।” তার এই বিতর্কিত মন্তব্যের জবাবে রিজওয়ানা হাসান জানান, “এমন বক্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বিপজ্জনক। ছাত্রনেতাদের উচিত তাদের মন্তব্যের ব্যাখ্যা দেওয়া।”
এনসিপি গঠিত হয় এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে, ছাত্র আন্দোলন–নেতৃত্বাধীন “স্টুডেন্টস এগেইনস্ট ডিসক্রিমিনেশন (এসএডি)” আন্দোলনের ভিত্তিতে। গত বছরের “জুলাই বিদ্রোহ”–ই ছিল এই আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু, যা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটায়।
সে সময় ড. ইউনুস বিদেশে অবস্থান করছিলেন। আন্দোলনের পর তিনি প্যারিস থেকে ফিরে এসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ছাত্রনেতাদের “আমার নিয়োগদাতা” বলে উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে তিনজন ছাত্রনেতা উপদেষ্টা হিসেবে সরকারে যুক্ত হন, তাদের মধ্যে নাহিদ ইসলাম পরবর্তীতে পদত্যাগ করে এনসিপির নেতৃত্বে আসেন।
গত মে মাসে এনসিপির চাপে ড. ইউনুসের সরকার আওয়ামী লীগের সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। দলটির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিচার শুরু হয়। শত শত নেতা-কর্মী গ্রেফতার হন, হাজার হাজার মানুষ গা-ঢাকা দেন। এনসিপি ঘোষণা দেয়, “আওয়ামী লীগকে জাতীয় রাজনীতি থেকে চিরতরে মুছে ফেলা হবে।”
একইদিন বুধবার, একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের ২৯ জন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। অভিযোগ অনুযায়ী, তার শাসনামলে গুম, নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বহু ঘটনা ঘটেছে, যার তদন্ত এখন চলমান।
এই বিতর্ক ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকারের মধ্যে আস্থাহীনতার সংকটকে সামনে নিয়ে এসেছে। ছাত্রনেতাদের অভিযোগ ও উপদেষ্টাদের পাল্টা প্রতিক্রিয়া ইঙ্গিত দিচ্ছে, শেখ হাসিনার পতনের পর নতুন ক্ষমতাসূত্রেও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও দিকনির্দেশনার অভাব প্রকট হয়ে উঠছে।
সূত্রঃ ইন্ডিয়া টুডে
এম.কে
১০ অক্টোবর ২০২৫