যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী শিশু যৌন শোষণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে চলমান বিতর্কে- রাজনীতিবিদদের ‘সমর্থন পাওয়ার খেলায়’ লিপ্ত হওয়া নিয়ে কটাক্ষ করেছেন।
কেয়ার স্টারমার এলন মাস্কের যুক্তরাজ্যে সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান অস্থির আক্রমণের নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, গ্রুমিং গ্যাং নিয়ে এলন মাস্কের “মিথ্যা ও ভুল তথ্য” উগ্র ডানপন্থার “বিষ” আরও ছড়িয়ে দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী কনজারভেটিভ রাজনীতিবিদদের কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন, যারা ক্ষমতায় থাকার সময় শিশু যৌন নিপীড়নের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করেনি অথচ এখন জাতীয় তদন্ত দাবি করছে। তিনি তাদের অভিযুক্ত করেছেন তারা ভুক্তভোগীদের সমর্থনের চেয়ে নিজেদের স্বার্থে বেশি আগ্রহী।
যুক্তরাজ্যের বর্তমান সরকারের মন্ত্রীরা সোমবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ২০২২ সালের প্রফেসর অ্যালেক্সিস জয়ের শিশু যৌন নিপীড়ন তদন্তের সুপারিশ বাস্তবায়ন করবেন। এর আওতায় শিশুদের সঙ্গে কাজ করা পেশাদারদের জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করা হবে, যা অনুযায়ী তারা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ রিপোর্ট করতে ব্যর্থ হলে শাস্তির মুখোমুখি হবেন।
এলন মাস্কের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ স্টারমারকে নিয়ে উগ্র সমালোচনার মধ্যে, স্টারমার বলেছেন যে, বিষয়টি সীমা অতিক্রম করেছে। বিশেষত, যখন এমপিদের (যেমন সেফগার্ডিং মন্ত্রী জেস ফিলিপস) বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এলন মাস্ক জেস ফিলিপসকে “ধর্ষণ গণহত্যার পক্ষপাতী” বলে অভিযুক্ত করেছেন এবং তাকে জেলে পাঠানোর দাবি করেছেন।
এলন মাস্কের দাবি অনুযায়ী, স্টারমার “ব্রিটেনে ধর্ষকদের সহায়তাকারী”। সোমবার মাস্ক তাকে “পুরোপুরি নিন্দনীয়” এবং “ভোটের বিনিময়ে গণধর্ষণে সহায়তাকারী” বলে বর্ণনা করেছেন।
স্টারমার বছরের প্রথম প্রকাশ্য বক্তব্যে মাস্ক এবং কনজারভেটিভদের তীব্র সমালোচনা করেন। এনএইচএসের ভবিষ্যৎ নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে একটি ভাষণে তিনি বলেন, “যারা মিথ্যা ও ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে, তারা ভুক্তভোগীদের নিয়ে চিন্তিত নয়, তারা নিজেদের নিয়ে চিন্তিত।
রাজনীতির তর্ক-বিতর্ক আমি উপভোগ করি, তবে তা অবশ্যই সত্য ও তথ্যের ভিত্তিতে হওয়া উচিত। মিথ্যা বা এমন কারও কথায় নয় যারা এতটাই মনোযোগের জন্য মরিয়া যে তারা নিজেদের এবং দেশের মর্যাদা নষ্ট করতে প্রস্তুত।
এমন রাজনীতিবিদ যারা কেবল মনোযোগ পাওয়ার জন্য কথার ঝড় তোলে তাদের আমি অপছন্দ করি। অথচ তারা ১৪ বছর ক্ষমতায় ছিল। তারা টুইট করেছে, কথা বলেছে, কিন্তু কাজ করেনি। এখন মনোযোগ পাওয়ার জন্য তারা উগ্র ডানপন্থার কথাকে আরও জোরদার করছে।”
স্বরাষ্ট্রসচিব ইভেট কুপার জানিয়েছেন, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে বাধ্যতামূলক রিপোর্টিং পুলিশ আইন প্রস্তাবে যুক্ত করা হবে।
কুপার বলেছেন, “১০ বছর আগে রোথারহ্যামের ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে এই পদক্ষেপ গ্রহণের চিন্তা করে সরকার। আমরা একটি দশক হারিয়ে ফেলেছি এবং এখন আমাদের দ্রুত এগোতে হবে।”
স্টারমার তার ডিরেক্টর অফ পাবলিক প্রসিকিউশন হিসেবে নিজের রেকর্ডের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি পুরো প্রসিকিউশন পদ্ধতি পরিবর্তন করেছি, কারণ আমি চেয়েছিলাম মিথ ও ধ্যানধারণাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করতে যা সাধারণত ভুক্তভোগীদের কণ্ঠ রোধ করে। যখন আমি দায়িত্ব ছেড়ে আসি, তখন শিশু যৌন নিপীড়ন মামলাগুলোর সর্বোচ্চ সংখ্যায় ছিল।”
তিনি আরও বলেন, “ হুমকি ও সহিংসতার আশঙ্কা তৈরি করে মনোযোগ পাওয়ার যে প্রয়াস তা আমাদের প্রথম থামাতে হবে।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৭ জানুয়ারি ২০২৫