TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

করোনার নতুন ধরনের সংক্রমণ, ভারত ভ্রমণে সতর্কবার্তা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের

বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের দ্রুত সংক্রমণকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। দেশের সকল স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং কার্যক্রম এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রক্রিয়া জোরদার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ভারতের ‘NB.1.8.1’ ভ্যারিয়েন্টসহ একাধিক ওমিক্রন উপধারার দ্রুত বিস্তারের প্রেক্ষাপটে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিধি অনুযায়ী বিমানবন্দর, বেনাপোল, আখাউড়া, বুড়িমারীসহ সব স্থলবন্দরে সন্দেহভাজন যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি জিনগত সিকোয়েন্সিং পরীক্ষাও শুরু হয়েছে।

প্রায় দেড় বছর পর দেশে করোনাভাইরাসে একজন রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ৬ জুন ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ৮১ থেকে ৯০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি একাধিক শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।

সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে দেশে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৩ জন, যা মে মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬ জনে। জুনের প্রথম আট দিনে নতুন করে আরও ৩৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, থাইল্যান্ড, চীন ও ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশেও এক্সএফজি এবং এক্সএফসি নামের দুইটি নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে, যেগুলো ওমিক্রনের জেএন.১ উপধারার অংশ। এসব ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)।

দেশের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বয়স্ক, রোগপ্রবণ এবং দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতায় ভোগা ব্যক্তিদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলার অভ্যাস আবারও চালু করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

রেলপথ মন্ত্রণালয় ঈদ পরবর্তী ফিরতি যাত্রায় সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়তে পারে উল্লেখ করে এক বিজ্ঞপ্তিতে ট্রেনযাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বর্তমানে পর্যাপ্ত টিকা মজুত থাকা সত্ত্বেও টিকা গ্রহণে জনগণের আগ্রহ কম। বিশেষ করে বিদেশগামী যাত্রী ব্যতীত সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে টিকা গ্রহণের হার আশানুরূপ নয়। ২২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ইপিআই বৈঠকে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে টিকাদানে উৎসাহিত করার প্রস্তাব গৃহীত হয়।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, “যেকোনো নতুন ভ্যারিয়েন্ট বয়স্ক ও শারীরিকভাবে দুর্বল মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এখন থেকেই মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, এবং টিকা গ্রহণের মতো সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলো মেনে চলা জরুরি।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, বাংলাদেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত মোট ২০,৫১,৭৪২ জন আক্রান্ত হয়েছেন, এবং মারা গেছেন ২৯,৫০০ জন। ২০২৪ সালে করোনায় কোনো মৃত্যু না হলেও, ২০২৩ সালে ৩৭ জন এবং ২০২২ সালে ১,৩৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও সতর্ক করে বলেছে, ভারতে ছড়িয়ে পড়া NB.1.8.1 ভ্যারিয়েন্ট ইতিমধ্যে বিশ্বের ১০.৭ শতাংশ সংক্রমণের জন্য দায়ী, যা এক মাস আগেও ছিল মাত্র ২.৫ শতাংশ।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. ফরহাদ হোসেন বলেন, “আমরা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছি। এবারের পরিস্থিতিতেও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে, দরকার শুধু জনগণের সহযোগিতা ও সচেতনতা।”

সূত্রঃ বিবিসি

এম.কে
১০ জুন ২০২৫

আরো পড়ুন

সীমান্তে গুলি চালাতে পারে বিএসএফ, বিজিবির মাইকিং

কোটা আন্দোলন নিয়ে ঢাকায় চলছে ‘বাংলা ব্লকেড’

বাংলাদেশ সরকারের তদন্তকারীরা টিউলিপ সিদ্দিকের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে