যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন মন্ত্রী আনেলিজ ডডস তার পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। কিয়ার স্টারমার প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি সাধনের জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য বাজেট প্রায় অর্ধেকে কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ক্যাবিনেট সদস্য ও প্রবীণ লেবার এমপি ডডস সতর্ক করেছেন যুক্তরাজ্যের এই পশ্চাদপসরণ রাশিয়ার অবস্থানকে শক্তিশালী করবে, যা ইতোমধ্যেই বৈশ্বিক পর্যায়ে আক্রমণাত্মকভাবে প্রভাব বাড়িয়ে চলেছে। পাশাপাশি এটি চীনের বৈশ্বিক নিয়ম পুনর্লিখনের প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করবে।
তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন কম বাজেটের কারণে প্রধানমন্ত্রী গাজা, সুদান ও ইউক্রেনের উন্নয়ন খাতে ব্যয় বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারবেন। কারণ ২০২৭ সালের মধ্যে বাজেট প্রায় ৬ বিলিয়ন পাউন্ড কমে যাবে।
ডডস বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন প্রধানমন্ত্রী প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি করার যথার্থ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কারণ রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ঐকমত্য “ধসে পড়েছে”।
তিনি স্বীকার করেছেন এই পদক্ষেপ নেওয়া সহজ ছিল না এবং ২০২৭ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ২.৫% এ উন্নীত করার পরিকল্পনার জন্য সাহায্য বাজেটে কিছুটা কাটছাঁট করতে তিনি প্রস্তুত ছিলেন। পরবর্তী সংসদে এই হার ৩% এ নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
কিন্তু লেবারের সাবেক শ্যাডো চ্যান্সেলর মনে করেন, স্টারমারের সাহায্য বাজেট কাটছাঁট করার পরিবর্তে অর্থ সংগ্রহের বিকল্প উপায় খোঁজা উচিত।
ক্যাবিনেট সদস্যরা ৪৬% সাহায্য বাজেট কাটার পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যা মোট জাতীয় আয়ের (GNI) ০.৫৬% থেকে কমিয়ে ০.৩% করা হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকায় সাহায্য বাজেট ব্যাপকভাবে কমানোর পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি চলতি মাসের শুরুতে বলেছিলেন, আমেরিকার এই পদক্ষেপ একটি “বড় কৌশলগত ভুল” হতে পারে, যা চীনকে বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দেবে।
ডডস জানান, সোমবার স্টারমারের কাছ থেকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানার পরপরই তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। তবে ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে স্টারমারের বৈঠক শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করেন, যাতে আলোচনায় কোনো প্রভাব না পড়ে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা পদত্যাগপত্রে ডডস লিখেছেন: “ নিঃসন্দেহে বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বৈশ্বিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি জরুরি, এবং আমি জানি এটি সহজ সিদ্ধান্ত নয়।
আমি আপনার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত ছিলাম যাতে প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি বাস্তবায়ন করা যায়। যদিও কিছু অর্থ উন্নয়ন বাজেট থেকে আসতে পারে। আমি আশা করেছিলাম আমরা কর ও ঋণের নিয়ম নিয়েও আলোচনা করব, যেমন অন্যান্য দেশ করছে।
এমনকি শুধুমাত্র সরকারী ব্যয় কমিয়ে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ সম্ভব নয়। বর্তমান সময় অভূতপূর্ব, যেখানে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
তবে ডডস, স্টারমারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে উন্নয়ন বাজেটের একটি বড় অংশ অভিবাসীদের আশ্রয় ব্যয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে সাহায্য খাতে পুনর্নির্দেশ করা হতে পারে। গাজা, সুদান, ইউক্রেন, টিকাদান কর্মসূচি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাহায্য বজায় রাখা হবে।
তবে ডডস লিখেছেন, “এই ব্যাপক বাজেট কাটার ফলে এসব অগ্রাধিকারের অর্থায়ন বজায় রাখা অসম্ভব হবে। এমনকি অভিবাসন ব্যয় কমানোর পরিকল্পনা কার্যকর হলেও এর প্রভাব প্রচণ্ড হবে।”
তিনি সতর্ক করেছেন এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক প্রভাবকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রগুলো এই শূন্যতা পূরণে এগিয়ে আসবে।
এই কাটছাঁটের ফলে যুক্তরাজ্য আফ্রিকা, ক্যারিবীয় অঞ্চল এবং পশ্চিম বলকানের বেশ কিছু দেশ থেকে সরে আসতে বাধ্য হবে, যখন রাশিয়া বিশ্বব্যাপী তাদের উপস্থিতি জোরদার করছে।
সবকিছু তখনই ঘটছে, যখন চীন বৈশ্বিক নিয়ম পুনর্লিখন করতে চাইছে, এবং জলবায়ু সংকটই আমাদের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা হুমকি।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫