স্যানিভেশন নামে কেনিয়ার এক কোম্পানি মানুষের মল প্রক্রিয়াকরণ ও পুনর্ব্যবহারের কাজে হাত পাকিয়েছে। উচ্চ তাপমাত্রায় ক্ষতিকারক প্যাথোজেন সরিয়ে ফেলার পর সেই কাঁচামাল ব্রিকেট বা কাঠকয়লায় রূপান্তরিত করা হয়।
কোম্পানির প্রতিনিধি ডেক্সটার গিকাস বলেন, ‘‘প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমরা সব সময়ে কৌতূহলী ছিলাম, আসলে আগে সম্ভব মনে হয়নি এই কাজ। কিন্তু যখন বাস্তবক্ষেত্রে মুখোমুখি হই তখন বোঝা যায় মনুষ্য বর্জ্য হতে মুনাফাও করা যায়।”
নাইরোবি থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে নাইভাশায় এই কোম্পানি সক্রিয় বলে জানা যায়। ট্রাক চালকরা আশপাশের জনপদে গিয়ে বাসার বাথরুম থেকে মল সংগ্রহ করেন।
জন কারিউকি ভ্যাকুয়াম ট্রাক অপারেটর হিসেবে প্রায় তিন বছর ধরে স্যানিভেশনে কাজ করছেন। নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে মনে হয়েছিল কাজটা বেশ খারাপ হবে, হয়তো স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে। কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে দেখলাম যে এই প্রক্রিয়ায় কোনও ধোঁয়া সৃষ্টি হয় না। ক্ষতিকারক গ্যাসও বের হয় না। কাঠকয়লায় কার্বন মোনোক্সাইড থাকে। কিন্তু এই মানুষের মল হতে তৈরি ব্রিকেটের মধ্যে তা নেই।’’
তথ্যানুযায়ী জানা যায়, প্রতি মাসে ১২টি ট্রাক বোঝাই কাদার আকারের মল সংগ্রহ করা হয়। প্রত্যেকটি ট্রাকে প্রায় ২০ হাজার লিটার তরল থাকে। সবার আগে তরল ও কঠিন আলাদা করা হয়। তারপর তরল পদার্থ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্টে নিয়ে যাওয়া হয়। প্লাস্টিকসহ সব রকমের বর্জ্য পয়ঃপ্রণালীতে গিয়ে পড়ে। কিন্তু সংগৃহীত কাদা হতে সব আলাদা করা হয়। কঠিন পদার্থ বেশ কয়েকশ’ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হয়। তারপর সেটি প্রক্রিয়াজাত করে জৈব পদার্থের সঙ্গে মেশানো হয়। চূড়ান্ত ব্রিকেটে পাঁচ থেকে তিরিশ শতাংশ শুকনো মল থাকে। এই কোম্পানি মাসে প্রায় ১০০ টন মলযুক্ত ব্রিকেট তৈরি করে।
ডেক্সটার গিকাস বলেন, ‘‘ আমরা মানুষকে নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনার সুবিধা দিচ্ছি। যে বর্জ্য রোগব্যাধি সৃষ্টি এবং পরিবেশ দূষণ করতো আমরা তা সরিয়ে দিচ্ছি। আমরা জনপদে কাজ করছি, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান করছি। এই কোম্পানি পরোক্ষভাবে প্রায় ১০০ মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব করেছে। সরাসরি ৫৬ জন কোম্পানির কর্মী হিসেবে কাজ করেন। গোটা প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে তারা সক্রিয়। ”
জন কারিউকির মতে, রান্নাসহ নানা কাজে এই ব্রিকেট ব্যবহারের অনেক সুবিধা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এটি আরও কার্যকর, অনেক বেশি টেকসই এবং এতে খাবার ভালোভাবে রান্না করা যায়। জ্বালানি হিসেবে এটির আরো ব্যবহার রয়েছে। চারকোলের অনেক ক্ষতিকারক প্রভাব ছিল, এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু ব্রিকেট পরিষ্কারভাবে ব্যবহার করা যায়। কোনও ক্ষতিকারক নির্গমন ঘটে না।’’
উল্লেখ্য যে, কেনিয়ার নাইভাশার বিভিন্ন ক্যাফেতে ও রেস্তোরাঁয় মানুষের মলের ব্রিকেট ব্যবহার করছে। এর আগে সেখানে পাথরের চুলায় লাকড়ি ব্যবহার করা হতো। কিন্তু সেগুলোর দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং বর্ষার মৌসুমে লাকড়ি পাওয়া কঠিন হওয়ায় মানুষের মলের ব্রিকেটই একমাত্র ভরসা বলে জানান স্থানীয় লোকেরা।
সূত্রঃ ডয়চে ভেলে
এম.কে
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪