ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য নির্ধারিত একটি স্কিমের মাধ্যমে আবেদন করা এক ফিলিস্তিনি পরিবারকে যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি দেওয়া বিচারকের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলে মন্তব্য করেছেন কিয়ের স্টারমার।
গাজা থেকে পালানোর চেষ্টা করা ছয় সদস্যের এক পরিবারকে তাদের যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ভাইয়ের সঙ্গে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। একটি অভিবাসন আদালত রায় দিয়েছিল যে, তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হোম অফিসের সিদ্ধান্ত মানবাধিকারের লঙ্ঘন।
স্টারমার বলেছেন, তিনি এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নন এবং হোম অফিস এই আইনি ফাঁকফোকর বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে। পরিবারটি “ইউক্রেন ফ্যামিলি স্কিম” ব্যবহার করে আবেদন করেছিল।
উচ্চতর ট্রাইব্যুনালের বিচারক হুগো নর্টন-টেইলর পরিবারটিকে যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি দেন ইউরোপীয় মানবাধিকার কনভেনশনের (ECHR) অনুচ্ছেদ ৮ অনুযায়ী পারিবারিক জীবনের অধিকারের ভিত্তিতে।
তিনি রায়ে বলেন, ” আমরা উপসংহারে পৌঁছেছি যে, এই নির্দিষ্ট মামলাগুলোর বাস্তব পরিস্থিতির আলোকে, হোম অফিস যে যৌথ মানবাধিকার দাবিটি প্রত্যাখ্যান করেছে, তা আবেদনকারীদের স্বার্থ ও জনস্বার্থের মধ্যে ন্যায্য ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, ” একত্রে বিবেচনা করলে, আবেদনকারীদের পক্ষে থাকা বিষয়গুলোর ওজন অত্যন্ত শক্তিশালী দাবির ইঙ্গিত দেয়। অন্যভাবে বললে, এখানে অত্যন্ত জোরালো বা ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি রয়েছে। তাই আবেদনকারীদের আপিল গৃহীত হলো।”
তিনি উল্লেখ করেন যে, পরিবারের সবচেয়ে ছোট দুই শিশু (৭ ও ৯ বছর বয়সী) প্রতিদিন মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে এবং তাদের বাবা-মা ও ভাইবোনদের সঙ্গে নিরাপদ পরিবেশে থাকাই তাদের জন্য সর্বোত্তম।
বুধবার পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী’র প্রশ্নোত্তর পর্বে (PMQs) কনজারভেটিভ নেতা কেমি বাডেনোকের প্রশ্নের জবাবে স্টারমার বলেন, ” আমি এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নই। বাডেনোক সঠিক বলেছেন, এটি ভুল সিদ্ধান্ত। তবে তিনি পুরো বিষয়টি বোঝেননি, কারণ এই সিদ্ধান্ত আগের সরকারে নেওয়া হয়েছিল।”
স্টারমার আরও বলেন, ” অভিবাসনের নিয়ম পার্লামেন্টেরই ঠিক করা উচিত, নীতিগুলো সরকারকেই নির্ধারণ করতে হবে। সেটাই মূল নীতি। এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইতিমধ্যেই এই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আইনি ফাঁকফোকর বন্ধ করার ব্যাপারে কাজ করছেন।”
ডেইলি টেলিগ্রাফের প্রথম প্রতিবেদনে জানানো হয়, পরিবারটি—মা, বাবা ও চার শিশু (৭ থেকে ১৮ বছর বয়সী)—একটি বিমান হামলায় তাদের বাড়ি ধ্বংস হওয়ার পর গাজার একটি শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছিল, যেখানে তারা প্রতিদিন ইসরায়েলি সামরিক হামলার হুমকির মুখে ছিল।
তারা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে “ইউক্রেন স্কিমের” আবেদনপত্র ব্যবহার করে আবেদন করেছিল, কারণ তারা মনে করেছিল এটি তাদের পরিস্থিতির জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। তারা যুক্তি দিয়েছিল, তাদের অবস্থা এতটাই জরুরি ও মানবিক যে, নিয়মের বাইরে গিয়েও তাদের আবেদন মঞ্জুর করা উচিত।
এই স্কিমটি মার্চ ২০২২ সালে চালু করা হয়, যা ইউক্রেনীয় নাগরিক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাজ্যে আসার অনুমতি দেয়, যদি তাদের কোনো আত্মীয় যুক্তরাজ্যের নাগরিক বা এখানে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী হন। এই স্কিমের অধীনে প্রায় ৭২,০০০ ভিসা ইস্যু করা হয়েছিল, তবে এটি ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বন্ধ হয়ে যায়।
পরিবারটির আবেদন প্রথমে একটি অভিবাসন ট্রাইব্যুনালে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল, কারণ এটি ইউক্রেন স্কিমের নিয়মের মধ্যে পড়েনি এবং সংসদ নির্ধারণ করে কোন দেশ পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় পড়বে।
ডাউনিং স্ট্রিট জানিয়েছে, এই আইনি ফাঁকফোকর বন্ধের জন্য সরকার তার সমাধান “আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে” ঘোষণা করবে।
তবে প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র বলেছেন, সরকার বিচারকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করবে কি না, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫