25.1 C
London
July 12, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

গাড়ি চুরি, ধাওয়া, মৃত্যুঃ ভেঙ্গে পড়ছে ব্রিটেনের আইনশৃঙ্খলা

ইংল্যান্ডের সান্ডারল্যান্ডে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনা ফের প্রশ্ন তুলেছে যুক্তরাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সরকারের দায়দায়িত্ব নিয়ে। চুরি হওয়া একটি BMW গাড়িকে ধাওয়া করার সময় সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঢুকে পড়ে একটি বৃদ্ধাশ্রমে। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ৯০ ও ৮০ বছর বয়সী দুই বৃদ্ধা।
মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটে ৯ জুলাই বুধবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটে, উইদারওয়াক এলাকার ‘হাইক্লিফ কেয়ার হোম’-এ। পুলিশ জানায়, গাড়িটি চুরি করা হয়েছিল এবং দুই যুবক পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালানোর চেষ্টা করছিল। দ্রুতগতিতে পালাতে গিয়ে তারা কেয়ার হোমের দেয়াল ভেঙে গাড়িটি সোজা ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়।

এ ঘটনায় পুলিশ ২১ বছর বয়সী দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। পাশাপাশি আরও আটজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়, যাদের মধ্যে একজন ছাড়া সবাইকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

তবে শুধু এই ঘটনাটি নয়—এ যেন লন্ডনসহ সমগ্র ইংল্যান্ড জুড়ে বেড়ে চলা অপরাধের প্রতিচ্ছবি। গাড়ি চুরি, ছিনতাই, ছুরিকাঘাত, পার্স ছিনিয়ে নেওয়া কিংবা ভয়াবহ গ্যাং সহিংসতা এখন শুধু সাধারণ মানুষের দুর্ভাগ্য নয়—এটা যেন যুক্তরাজ্যের দৈনন্দিন বাস্তবতা।

কনজারভেটিভদের দীর্ঘমেয়াদি শাসনের পর লেবার পার্টির কাছে জনগণের প্রত্যাশা ছিল পরিবর্তন, বিশেষত অপরাধ দমনে দৃশ্যমান অগ্রগতি। কিন্তু কেয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার সেই প্রত্যাশার কতটা জবাব দিতে পারছে, তা নিয়ে এখন গভীর প্রশ্ন উঠছে। এই দুর্ঘটনা লেবার সরকারের প্রথম বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের চুরি ও সহিংস অপরাধ বাড়ার জন্য দায়ী সরকারের অপর্যাপ্ত পুলিশি তৎপরতা, অপরাধীদের প্রতি নরম মনোভাব এবং দীর্ঘদিন ধরে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিনিয়োগের অভাব।

ব্রিটেনে প্রতিদিন গড়ে শত শত গাড়ি চুরি হচ্ছে, যার বেশিরভাগই পরবর্তীতে ব্যবহৃত হচ্ছে অন্যান্য অপরাধে—পালানোর গাড়ি হিসেবে, বা ছিনতাইয়ে। অথচ পুলিশ বাহিনী জনবল সংকটে ভুগছে, টহল কার্যক্রম সীমিত এবং বিচারিক প্রক্রিয়া দীর্ঘ।

প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার ইতিমধ্যেই অভিবাসন সমস্যা নিয়ে সমালোচনার মুখে রয়েছেন। এখন দেশের ভিতরে এমন প্রাণঘাতী নিরাপত্তা ব্যর্থতা তার সরকারের উপর আরও চাপ সৃষ্টি করেছে। অভিবাসন সংকট, আইনশৃঙ্খলা অবনতি এবং বিচারপ্রক্রিয়ার ধীরগতির কারণে জনগণের আস্থা প্রতিনিয়ত নড়বড়ে হয়ে পড়ছে।

সমালোচকদের মতে, এই ঘটনাটি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—যুক্তরাজ্যে সাধারণ নাগরিক, এমনকি বৃদ্ধ ও অক্ষম মানুষের জীবনও আজ অনিরাপদ। একজন চোর, একজন অপরাধীর দৌরাত্ম্য কীভাবে অসহায় বৃদ্ধাদের জীবন কেড়ে নিতে পারে, তা ভাবিয়ে তুলছে গোটা জাতিকে।

তাদের মতে, সরকার যদি এখনই সচেতন না হয়, তাহলে শুধু এই দুটি জীবন নয়—প্রতিদিনই এমন অজস্র নিরীহ মানুষ অপরাধের বলি হয়ে যাবেন।

সূত্রঃ দ্য এক্সপ্রেস

এম.কে
১২ জুলাই ২০২৫

আরো পড়ুন

ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ লক্ষ্য করে বোমা ছুঁড়ল রাশিয়া

অনলাইন ডেস্ক

ই-সিগারেট নিয়ে যুক্তরাজ্য প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ

যুক্তরাজ্যের অ্যাশফোর্ড এলাকায় ‘ধর্ষণ’