আগামী ২৫ ডিসেম্বর দীর্ঘ ১৮ বছর পর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ‘অবিস্মরণীয়’ করে তুলতে এরই মধ্যে আবাসন, দলীয় কার্যালয় ও রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিএনপি।
দলীয় সূত্র জানায়, ঢাকায় ফেরার পর তারেক রহমান গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে উঠবেন। এটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’র পাশেই অবস্থিত। একই সঙ্গে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্য আলাদা চেম্বার প্রস্তুত করা হয়েছে। পাশাপাশি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গুলশানে আরও একটি বাসা ভাড়া নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কের ১০/সি নম্বর ভবনে নবভাড়া নেওয়া বিএনপির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় রিল-মেকিং প্রতিযোগিতা ‘আমার ভাবনায় বাংলাদেশ’ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন জানান, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
২৫ ডিসেম্বর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে দলীয় নেতাকর্মীরা তারেক রহমানকে সংবর্ধনা জানাবেন বলে জানিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের মানুষ তাদের নেতার অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি জানান, সেদিন বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সড়কের দুপাশে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান নিয়ে তারেক রহমানকে স্বাগত জানাবেন।
সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় তারেক রহমানকে কীভাবে সংবর্ধনা দেওয়া হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাড়িটি ঐতিহাসিকভাবে বিএনপি নেতৃত্বের সঙ্গে জড়িত। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের মন্ত্রিসভা সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে বেগম খালেদা জিয়াকে এ বাড়িটি বরাদ্দ দেয়। কয়েক মাস আগে বাড়িটির দলিলপত্র বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে সেখানে তারেক রহমানের বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাড়িটির সামনে নিরাপত্তা ছাউনি স্থাপন করা হয়েছে এবং সড়কের পাশে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। নিরাপত্তাকর্মীরা জানিয়েছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেখানে অবস্থান করবেন—এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে গুলশান ও নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়েও তারেক রহমানের জন্য আলাদা চেম্বার প্রস্তুত করা হয়েছে। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগে থেকেই বিএনপি চেয়ারপারসন ও মহাসচিবের পৃথক চেম্বার রয়েছে। এবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্যও আলাদা চেম্বার যুক্ত করা হলো।
গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কের ১০/সি ভবনটি নতুন বিএনপি অফিস হিসেবে ভাড়া নেওয়া হয়েছে। চারতলা ভবনটিতে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে ব্রিফিং রুম, অন্যান্য তলায় বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বসার ব্যবস্থা ও গবেষণা সেল।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, দলের নেতাকর্মীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, কবে তারেক রহমান দেশের মাটিতে পা রাখবেন। তিনি বলেন, দলের সব প্রস্তুতি এখন তাকে কেন্দ্র করেই নেওয়া হচ্ছে এবং বিএনপি বিশ্বাস করে, তিনি দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দেবেন।
নতুন অফিস উদ্বোধনের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে মাহাদী আমিন বলেন, এই কার্যালয় থেকেই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিএনপির যাবতীয় রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। তিনি আরও বলেন, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ও আবেগ সৃষ্টি হয়েছে এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গঠনে দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
এম.কে

