13 C
London
October 17, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ, তবুও চালু হচ্ছে যুক্তরাজ্যের ডিজিটাল ‘ভেটেরান কার্ড

যুক্তরাজ্যে সরকারের বিতর্কিত ডিজিটাল পরিচয়পত্র (ডিজিটাল আইডি) প্রকল্প পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে প্রাক্তন সেনা সদস্যদের মাধ্যমে। শুক্রবার থেকে স্মার্টফোনভিত্তিক ‘ভেটেরান কার্ড’ চালু করা হয়েছে, যা প্রথম ধাপে ১৮ লাখ প্রাক্তন সেনাসদস্য ব্যবহার করতে পারবেন। সরকার বলছে, এটি হবে দেশের ডিজিটাল পরিচয়পত্র ব্যবস্থার প্রথম বড় ধাপ।

বর্তমানে এই কার্ডের শারীরিক সংস্করণ প্রাক্তন সেনাদের বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা, খুচরা দোকান এবং সরকারি সেবায় ছাড় দেয়। তবে এবার সরকার চাইছে নাগরিকদের সব সরকারি পরিচয়পত্র — যেমন ড্রাইভিং লাইসেন্স বা চাকরির অনুমোদন — ধীরে ধীরে ডিজিটাল আকারে একই প্ল্যাটফর্মে সংরক্ষণ করতে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ ডিজিটাল ড্রাইভিং লাইসেন্স চালুর পরিকল্পনা রয়েছে এবং ২০২৭ সালের মধ্যে সব সরকারি পরিচয়পত্র ডিজিটালভাবে ঐচ্ছিক ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার জানিয়েছেন, মেয়াদের শেষ নাগাদ যুক্তরাজ্যে কাজের অধিকার প্রমাণে ডিজিটাল আইডি বহন বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। তবে এই পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা উঠেছে। বিরোধী দল ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের দাবি, এটি নাগরিক স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার ওপর আঘাত। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই ২৯ লাখেরও বেশি মানুষ অনলাইনে পিটিশনে স্বাক্ষর করে প্রকল্পটি বাতিলের দাবি তুলেছেন।

প্রযুক্তিমন্ত্রী লিজ কেন্ডাল অবশ্য এই উদ্বেগকে “ভয় দেখানো” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সংসদে বলেন, ডিজিটাল আইডি নাগরিকদের ট্র্যাক করতে ব্যবহৃত হবে না এবং কোনো কেন্দ্রীয় ডেটাবেসে ব্যক্তিগত তথ্য একত্র করা হবে না। তার দাবি, নতুন পদ্ধতিটি সরকারি সেবা গ্রহণের প্রক্রিয়া সহজ করবে এবং অপ্রয়োজনীয় জটিলতা কমাবে।

প্রবীণ কার্ডটি ব্যবহারকারীরা ‘Gov.uk One Login’ নামের একটি অ্যাপে সংরক্ষণ করতে পারবেন। আগে এটি ‘Gov.uk Wallet’ নামে চালু করার পরিকল্পনা ছিল, তবে সরকার এখন এই দুই ব্যবস্থাকে একীভূত করছে। কার্ডের তথ্য এনক্রিপশনের মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকবে, এবং এতে প্রবেশ করতে ফেস আইডি বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রয়োজন হবে। সরকার বলছে, এই পদ্ধতি প্রচলিত শারীরিক আইডির চেয়ে নিরাপদ।

তবে সব পক্ষ এই উদ্যোগে সন্তুষ্ট নয়। ভেটেরানস অ্যাসোসিয়েশন ইউকের মিডিয়া পরিচালক স্টিফেন কেন্ট অভিযোগ করেছেন, “আমাদের এই কার্ডের প্রয়োজন নেই। সরকার আমাদের দিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে।” অন্যদিকে রয়্যাল ব্রিটিশ লিজিয়ন, যারা প্রবীণ সেনাদের সহায়তায় কাজ করে, এই পদক্ষেপকে “ইতিবাচক” বলে উল্লেখ করেছে এবং জানিয়েছে, এটি সেবা ও সুবিধা পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করবে।

প্রকল্পের সমালোচনায় কনজারভেটিভ, লিবারেল ডেমোক্র্যাট এবং স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টিও যোগ দিয়েছে। লেবার দলের মধ্যেও বিভক্তি দেখা গেছে। এমপি রিচার্ড বারগন বলেছেন, এই পরিকল্পনা “নাগরিক স্বাধীনতা ও তথ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর কাছে ব্যক্তিগত তথ্য চলে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে।”

মন্ত্রী কেন্ডাল জানিয়েছেন, সরকার কোনোভাবেই নাগরিকদের তথ্য বেসরকারি বা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে দেবে না। এটি সরকারের নিজস্ব ডিজিটাল সার্ভিস বিভাগই তৈরি করবে। ধারণা করা হচ্ছে, পুরো সিস্টেম স্থাপন করতে ব্যয় হতে পারে প্রায় এক বিলিয়ন পাউন্ড। তিনি আরও আশ্বস্ত করেছেন, এই ডিজিটাল আইডির মাধ্যমে কখনোই নাগরিকদের অবস্থান, ক্রয় আচরণ বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হবে না এবং পুলিশ কাউকে এটি দেখাতে বাধ্যও করতে পারবে না।

তবু সংসদীয় মহলে আশঙ্কা রয়ে গেছে— ভবিষ্যতে কোনো সরকার এই ডিজিটাল পরিচয় ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। তাই প্রযুক্তিগত নিরাপত্তার পাশাপাশি এখন মূল বিতর্ক ঘুরছে নাগরিক অধিকার ও রাষ্ট্রীয় আস্থার প্রশ্নে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
১৭ অক্টোবর ২০২৫

আরো পড়ুন

অক্সফোর্ডের টিকা অনুমোদন দিলো যুক্তরাজ্য

অনলাইন ডেস্ক

সরকারের ব্যাংকিত খাতে জালিয়াতি দমনের পরিকল্পনা নিয়ে নতুন ঝুঁকি

হাজারো ইইউ নাগরিকের বেনিফিট বন্ধ হবে আগামী মাসে

অনলাইন ডেস্ক