লন্ডনের মেয়র সাদিক খান যুক্তরাজ্য সরকারের নতুন অভিবাসন নীতিমালা স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছেন। ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন (TfL)-এর প্রায় ৩০০ কর্মীর যুক্তরাজ্যে থাকার ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় তিনি এই আহ্বান জানান। ট্রান্সপোর্ট স্যালারিড স্টাফস অ্যাসোসিয়েশন (TSSA) জানিয়েছে, নতুন নিয়মের ফলে বহু কর্মীর ভিসা বাতিল হতে পারে, যা তাদের পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
গত জুলাই মাসে সরকার যে পরিবর্তনগুলো ঘোষণা করে, তার মধ্যে ছিল ভিসা স্পনসরশিপের ন্যূনতম বেতনসীমা বৃদ্ধি এবং কিছু পরিবহন পদের নাম “skilled worker” তালিকা থেকে বাদ দেওয়া। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ভিসা স্পনসরশিপের জন্য ন্যূনতম বার্ষিক বেতনসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে £৪১,৭০০। অথচ TfL তাদের গ্র্যাজুয়েট কর্মীদের প্রারম্ভিক বেতন দেয় £৩১,০০০, আর ট্রেইনি স্টেশন স্টাফদের বেতন £৩৫,৩০০ থেকে £৪১,৮০০-এর মধ্যে।
৯ অক্টোবর লন্ডন অ্যাসেম্বলিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সাদিক খান বলেন, এই পরিবর্তনগুলো TfL কর্মীদের “অনিশ্চয়তা ও দুশ্চিন্তায়” ফেলে দিয়েছে। তিনি জানান, ডেপুটি মেয়র ফর ট্রান্সপোর্ট সেব ড্যান্স মাইগ্রেশন মন্ত্রীকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছেন—এই নিয়মগুলো সাময়িকভাবে স্থগিত রাখতে এবং TfL কর্মীদের অবিলম্বে সুরক্ষা দিতে। মেয়রের ভাষায়, সরকার “গোলপোস্ট সরাচ্ছে” এবং এর ফলে TfL-এর গুরুত্বপূর্ণ কাজ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গ্রীন পার্টির লন্ডন অ্যাসেম্বলি নেত্রী ক্যারোলিন রাসেল জানান, তিনি এমন কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন যারা উদ্বেগের কারণে ঘুমাতে পারছেন না। এক নারী কর্মীর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “তিনি প্রথম সন্তানসম্ভবা, তার আনন্দিত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এখন তিনি ভীত—তার সন্তানের জন্মের আগেই হয়তো তাকে দেশ ছাড়তে হবে।” রাসেল এই পরিস্থিতিকে “সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতির প্রতি এক নির্মম বিশ্বাসঘাতকতা” বলে উল্লেখ করেন।
আরএমটি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এডি ডেম্পসি মেয়রের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “পরিষ্কার ভিসা চুক্তির অধীনে নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা এখন অপ্রয়োজনীয় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। তারা প্রতিদিন লন্ডনকে সচল রাখছেন—এমন কর্মীদের সঙ্গে এ আচরণ অন্যায়।” তিনি আরও জানান, লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডে কর্মরত আরএমটি-র অন্তত ৬৩ জন সদস্যের বিরুদ্ধে দেশ ছাড়ার নির্দেশ আসতে পারে, যাদের মধ্যে কয়েকজনকে নভেম্বরের মধ্যেই যুক্তরাজ্য ছাড়তে হতে পারে।
TSSA ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মারিয়াম এসলামদুস্তের মতে, এই নীতিমালায় সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন টিউব স্টেশনগুলিতে কর্মরত কাস্টমার সার্ভিস অ্যাসিস্ট্যান্টরা, যাদের অধিকাংশই যুক্তরাজ্যে এসেছেন “skilled worker” বা “graduate visa”-তে। TfL-এর এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা যেসব সহকর্মী এই পরিবর্তনের ফলে প্রভাবিত হয়েছেন, তাদের সহায়তায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং বিকল্প পথগুলো খুঁজে দেখছি যাতে তারা যুক্তরাজ্যে থেকে কাজ চালিয়ে যেতে পারেন।”
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
১২ অক্টোবর ২০২৫