8.5 C
London
December 26, 2024
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

চন্দন হতে গেরুয়া সন্ত্রাসী চিন্ময় হবার গল্প

বাবা-মায়ের দেওয়া নাম চন্দন কুমার ধর। উগ্র ধর্মীয় সংগঠন ইসকনে যোগ দেওয়ার পর বনে যান চিন্ময় কুমার দাস ব্রহ্মচারী। ভক্তরা তাকে ডাকেন চিন্ময় প্রভু নামে। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের ১৬ নম্বর করায়নগর এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা মৃত মাস্টার আশুতোষ ধর ও সন্ধ্যা রানী ধরের ছেলে তিনি। বড় ভাই রঞ্জন কুমার ধর, মেজো ভাই অঞ্জন কুমার ধর ও বোন রুনা ধরের পরে জন্ম তার।

১৯৮৫ সালে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগের সমাবেশে যোগ দিতে এসে ভিড়ের কারণে স্ট্রোক করে মারা যান আশুতোষ ধর। ওইদিনই কক্সবাজারের ডুলাহাজারা মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন চিন্ময়। জন্মের সময় বাবার মৃত্যু হওয়ায় গ্রামের মানুষের কাছে অপয়া সন্তান হিসেবে পরিচিতি পায় চন্দন। অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ১৯৯৮ সালে সাতকানিয়া থেকে চট্টগ্রামে পাড়ি জমান সপরিবারে।

বন্দর নগরীতে এসে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত থাকা অবস্থায় হঠাৎ একদিন জানা গেল তিনি সন্ন্যাসী হয়েছেন। পরের গন্তব্য বিতর্কিত ইসকন। গেরুয়া বেশে উগ্র তৎপরতায় অল্প সময়ের মধ্যেই ইসকনের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। খাতা-কলমে সংগঠনটির তিন নম্বর নেতা হলেও কার্যত ইসকনের পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে যায় তারই হাতে।

ইসকনের বাইরে সাধারণ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করে মাঠে নামাতে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট নামের আরেকটি সংগঠন খুলেছিলেন চিন্ময়। ইসকনের আঞ্চলিক সদর দপ্তর হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের প্রবর্তক মন্দিরে ১৭ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তথাকথিত এই জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের পরিকল্পনায় ভারতপন্থি আরও কয়েকটি ছোটখাটো সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে নতুন এই জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটানো হয়, যার সমন্বয় করছেন ভারতে পালিয়ে থাকা পতিত সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তাদের পরিকল্পনায় অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ বানাতে সক্রিয় ছিলেন তথাকথিত ধর্মীয় গুরু চিন্ময় ওরফে চন্দন। সেই লক্ষ্যে সরকার পতনের পরপরই তিন মাসে অন্তত ১৫টি বড় সমাবেশ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে উসকে দেন তিনি।

চিন্ময় দাশের কথিত সনাতন জাগরণী জোটের কর্মসূচিতে জাতীয় পতাকার অবমাননার পর বিএসএফের হাতে বাংলাদেশিদের খুন হওয়ার ঘটনায় ভারতের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়ে সমালোচিত হন উগ্র এই ধর্মীয় নেতা চন্দন ধর ওরফে চিন্ময় দাশ। সম্প্রতি বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি কিশোরী স্বর্ণা দাস ও কিশোর জয়ন্ত কুমার সিংহ নিহত হওয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘সীমান্তে দুই হিন্দু মারা গেছে, এ জন্য মায়া-দরদ দেখাচ্ছে। ভারতের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে। তো, আমি বলতে চাই, তারা কেন সীমান্তে গেছে? আগে ওটি খুঁজে নিন।’

ইসকনের বিতর্কিত নেতা চিন্ময় দাসের বিরুদ্ধে অন্তত ১০ শিশুকে ধর্ষণ ও বলাৎকারের অভিযোগ তোলা হয়েছে। নিপীড়নের শিকার শিশুরা সবাই হাটহাজারী পুন্ডরিকধাম মন্দিরের বাসিন্দা। এই মন্দিরেরই অধ্যক্ষ হিসেবে আছেন চিন্ময় দাস। বিভিন্ন কৌশলে রাতে শিশুদের নিজের ঘরে নিয়ে বলাৎকার করতেন চিন্ময়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে চার শিশু চিন্ময় দাশের বিরুদ্ধে নিপীড়নের লিখিত অভিযোগ করেন ইসকন যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক শিশু সুরক্ষা কার্যালয়ে (সিপিটি)। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ওই বছরের ৬ অক্টোবর সিপিটি থেকে চিন্ময়কে ইসকনের নেতৃস্থানীয় পদে না রাখা, শিশু ও নারীদের সঙ্গে যোগাযোগে বিরত থাকাসহ পাঁচটি ক্যাটাগরিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, যা এখনো বহাল রয়েছে।

চিন্ময় দাসের আইনজীবীর নাম রবীন্দ্র ঘোষ। তার পরিবারের অন্য সদস্যরা ভারতে বসবাস করলেও তিনি বাংলাদেশেই থাকতেন। তবে বর্তমানে চিকিৎসা ভিসায় ভারতে অবস্থান করছেন। সেখানে বসেই চিন্ময়ের নির্দেশে পতিত শেখ হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়নে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে চলেছেন। একটি গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল রবীন্দ্র ঘোষের। এমন তথ্যের ভিত্তিতে তার ওপর নজরদারি শুরু করে বাংলাদেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। বিষয়টি বুঝতে পেরেই চিকিৎসার নামে ভারতে পালিয়ে যান তিনি।

উল্লেখ্য যে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ইসকন সদস্য হওয়ার পর তার মা সন্ধ্যা রানী ধরকে অনেকটা জোর করেই ইসকন সদস্য বানান চিন্ময়। বর্তমানে তিনি চিন্ময়ের সঙ্গে হাটহাজারী পুণ্ডরিখধামে থাকেন। তার বড় ভাই রঞ্জন ধর সাতকানিয়া কাঞ্চনা এলাকার একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। মেজো ভাই অঞ্জন ধর চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। বড় বোন অরুণা ধর গৃহিণী।

সূত্রঃ জনকন্ঠ

এম.কে
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

আরো পড়ুন

রাশিয়ান গুপ্তচরেরা ইংল্যান্ডের রাস্তায় গোলযোগের পাঁয়তারা করছেঃ এমআই ফাইভ

নিউজ ডেস্ক

দশ শতাংশ কৃষি জমির মালিক হলে ওই জেলায় পদায়ন নয় বিচারকদের

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সংগীতভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল গানবাংলা

নিউজ ডেস্ক