TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

চরম-ডানপন্থার উত্থানে রোমানিয়ায় অভিবাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতা তীব্র

রোমানিয়ার শ্রমবাজারে ঘাটতি পূরণের প্রধান শক্তি এখন বিদেশি শ্রমিকরা। কিন্তু অতি ডানপন্থি বক্তব্য, রাস্তা-ঘাটে সহিংসতা এবং অনলাইনে ঘৃণাচর্চা বেড়ে যাওয়ায় যাদের ওপর দেশটি অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল, সেই অভিবাসী কর্মীরা এখন গভীর উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন।

বুখারেস্টে ফুড ডেলিভারি রাইডার হিসেবে কাজ করেন ২৯ বছর বয়সি বাংলাদেশি সাব্বিরুল আলম। আগস্টে এক সহকর্মী বাংলাদেশি রাইডারের ওপর হামলা হওয়ার পর তিনি সন্ধ্যার পর কাজে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমি সত্যিই আতঙ্কে আছি… মানুষ খুব রেগে আছে বলে মনে হয়।” হামলার সময় আক্রমণকারী চিৎকার করেছিল— “তোমার দেশে ফিরে যাও!” এবং “তুমি একজন আক্রমণকারী!”

এই ঘটনার পেছনে ছিল চরম-ডানপন্থি দল AUR–এর এক নেতার উসকানি, যিনি রোমানিয়ানদের বিদেশি রাইডারদের কাছ থেকে খাবার না নিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট নিকুশোর ডান ঘটনাটিকে বর্ণবিদ্বেষী সহিংসতা আখ্যা দিয়ে বলেন, ঘৃণামূলক বক্তব্যই এসব হামলার জন্ম দিচ্ছে।

এদিকে বিদেশি কর্মীদের সংকট পূরণে রোমানিয়ার নির্ভরতা আরও বেড়েছে। ২০২৪ সালের শেষে দেশটিতে ১ লক্ষ ৪০ হাজারের বেশি নন-ইইউ কর্মী নির্মাণ, উৎপাদন, বাণিজ্য ও হোটেল খাতে কাজ করছিলেন। তাদের বড় অংশই নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের নাগরিক। কিন্তু শ্রমের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রতি বিদ্বেষও বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের নেতারা।

অনলাইনে ঘৃণামূলক পোস্ট, মিথ্যা দাবি এবং উসকানি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বিদেশিদের চাকরি ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কিছু রাইডার খাবারের ব্যাগে “আমি রোমানিয়ান” লিখে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন।

চরম-ডানপন্থি দলগুলো এখন রোমানিয়ার পার্লামেন্টের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসনে প্রভাব বিস্তার করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এর ফলে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা মূলধারার রাজনীতিতে জায়গা করে নিচ্ছে। ফলে ভুয়া তথ্যও দ্রুত ছড়াচ্ছে—যেমন AUR নেতা জর্জ সিমিওনের দাবি যে অভিবাসীদের রোমানিয়ানদের চেয়ে ভালো বাসস্থান দেওয়া হচ্ছে। যদিও ভবন মালিকেরা এই দাবি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন।

অভিবাসন ব্যবস্থাপনায়ও বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও ইইউর সমর্থিত দ্রুততর আশ্রয়প্রক্রিয়া চালুর ফলে অনিয়মিত সীমান্ত পারাপার কমেছে। তবে কাজের ভিসার নিয়ম কঠোর হওয়ায় অনেক কর্মী প্রতিশ্রুত চাকরি না পেয়ে পশ্চিম ইউরোপে ঝুঁকি নিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ২০২৩ সালের তথ্য বলছে, অনিয়মিতভাবে রোমানিয়া ছাড়ার চেষ্টা করা ব্যক্তিদের বড় অংশই বাংলাদেশি—যারা হাঙ্গেরিসহ বলকান রুট ধরে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেন।

রোমানিয়ায় অনেক দক্ষিণ এশীয় কর্মী যথাসময়ে বেতন না পাওয়া, চুক্তি পরিবর্তন, নথি বাজেয়াপ্ত হওয়া এবং ঋণ-দাসত্বের শিকার হচ্ছেন বলে নাগরিক সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে। এসব কারণে অনেকেই নিয়মিত থেকে অনিয়মিত অবস্থায় গিয়ে পড়ছেন।

হামলার ঘটনাও বেড়েছে। নভেম্বরের শুরুতে বুখারেস্টের কাছে এক শ্রীলঙ্কান রাইডারকে চার্জিং কেবল দিয়ে মারধর ও অপমান করা হয়। পরে তিনি ভয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। একটি ট্রেড ইউনিয়ন ঘোষণা করেছে—বিদেশি শ্রমিকদের আইনি সহায়তা বিনামূল্যে প্রদান করা হবে, কারণ এগুলো আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।

১৫ বছর ধরে রোমানিয়ায় থাকা শ্রীলঙ্কান আইটি কর্মী রুবান জয়াথাস বলেন, “অনলাইনে ঘৃণার বিস্তার এমন পর্যায়ে গেছে যা আমি কখনো কল্পনাও করিনি।”

ইউরোপীয় কাউন্সিলের মানবপাচারবিরোধী বিশেষজ্ঞ দল GRETA জানিয়েছে, রোমানিয়া আইন সংস্কার করলেও ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ২০২০–২০২৪ সালে ২,৬৬২ জন মানবপাচারের শিকার শনাক্ত হয়েছে, যাদের অর্ধেকই শিশু। যৌন শোষণ, জোরপূর্বক শ্রম, ভিক্ষাবৃত্তি ও অপরাধে বাধ্য করানো—মূল সমস্যা হিসেবে উঠে এসেছে। ভাষাগত বাধা, প্রতারণামূলক নিয়োগ এবং দুর্বল শ্রম তদারকির কারণে দক্ষিণ এশীয় কর্মীরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।

মানবপাচার রোধে ২০২৪–২০২৮ জাতীয় কৌশল ও আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করেছে রোমানিয়া—এ উদ্যোগ প্রশংসিত হলেও শ্রমিকদের বাস্তব সুরক্ষা এখনো অনিশ্চিত। নির্মাণ শ্রমিক, কারখানা কর্মী ও রাইডাররা—যারা রোমানিয়ার অর্থনৈতিক কাঠামো ধরে রেখেছে—তারা কতটা নিরাপদ থাকবেন, তাই দেখাবে সরকারের নীতি কতটা কার্যকর হয়েছে।

সূত্রঃ ইনফোমাইগ্র‍্যান্টস

এম.কে

আরো পড়ুন

মঙ্গলে অভিযানে যাওয়ার চেয়ে টিকায় বিনিয়োগ ভালো: বিল গেটস

নিউজ ডেস্ক

সাইপ্রাসে বিপুল জমি কিনছে ইসরায়েলিরা, দেশ বেদখলের শঙ্কা রাজনীতিবিদদের

ভারতের হামলাকে লজ্জাজনক বললেন ট্রাম্প, গুতেরেসের উদ্বেগ