যুক্তরাজ্যের শ্রমবাজারে স্পষ্ট দুর্বলতার চিত্র ফুটে উঠেছে। অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস (ONS) জানিয়েছে, অক্টোবর পর্যন্ত তিন মাসে দেশটির বেকারত্বের হার বেড়ে ৫.১ শতাংশে পৌঁছেছে, যা চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মহামারিকাল বাদ দিলে এই হার ২০১৬ সালের শুরুর পর সর্বোচ্চ বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
বেকারত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি মজুরি বৃদ্ধির গতি কমেছে। বোনাস বাদে আয় বৃদ্ধির হার সেপ্টেম্বরের ৪.৭ শতাংশ থেকে অক্টোবরে নেমে এসেছে ৪.৬ শতাংশে, যা ২০২২ সালের শুরুর পর সর্বনিম্ন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংক অব ইংল্যান্ড দীর্ঘদিন ধরেই সুদের হার কমানোর আগে মজুরি বৃদ্ধির আরও শ্লথতা দেখতে চাইছে।
চাকরির সংখ্যাতেও বড় ধাক্কার ইঙ্গিত মিলেছে। ONS-এর হিসাবে, নভেম্বর মাসে বেতনভুক্ত কর্মীর সংখ্যা ৩৮ হাজার কমে ৩ কোটি ৩ লাখে দাঁড়িয়েছে—পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন। একই সময়ে বেকার ভাতা দাবিদারের সংখ্যাও বেড়ে ১৬ লাখ ৯৬ হাজারে পৌঁছেছে, যা নিয়োগকর্তাদের ছাঁটাই বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই পরিসংখ্যান সুদের হার কমানোর পথ আরও প্রশস্ত করেছে। রয়টার্সের জরিপে অংশ নেওয়া বিশ্লেষকেরা আগেই অক্টোবর মাসে বেকারত্ব ৫.১ শতাংশে উঠবে বলে ধারণা দিয়েছিলেন। বাজারে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে যে, ব্যাংক অব ইংল্যান্ড নিকটবর্তী নীতিনির্ধারণী বৈঠকে সুদের হার ৪ শতাংশ থেকে ৩.৭৫ শতাংশে নামাতে পারে।
তরুণ কর্মীরাই এই সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ONS জানিয়েছে, কঠিন নিয়োগ পরিস্থিতিতে নতুন চাকরি পাওয়া তরুণদের জন্য আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। রেজোলিউশন ফাউন্ডেশনের গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৬ বছরের নিচে অতিরিক্ত ৪ লাখ ১৫ হাজার তরুণ বেকার তালিকায় যুক্ত হয়েছে।
ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো বলছে, উচ্চ ব্যয় ও নীতিগত অনিশ্চয়তার চাপেই নিয়োগ কমছে। ব্রিটিশ রিটেইল কনসোর্টিয়াম জানিয়েছে, বাড়তি খরচ সামলাতে খুচরা ব্যবসাগুলো উল্লেখযোগ্য চাকরি কাটছাঁটে গেছে। ব্রিটিশ চেম্বারস অব কমার্সের মতে, উচ্চ কর্মসংস্থান ব্যয় ও আসন্ন নতুন শ্রমআইনের আশঙ্কায় প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন কর্মী নিয়োগে পিছিয়ে পড়ছে।
অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্রও চাপের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সাম্প্রতিক তথ্যে অক্টোবরে জিডিপি অপ্রত্যাশিতভাবে ০.১ শতাংশ কমেছে। আইসিএইডব্লিউ-এর অর্থনীতি পরিচালক সুরেন থিরু বলেছেন, নীতিগত অনিশ্চয়তা ও অর্থনৈতিক মন্দা একসঙ্গে শ্রমবাজারকে দ্রুত দুর্বল করে তুলছে।
সরকার বলছে, চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও কর্মসংস্থানে কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। কর্ম ও পেনশনমন্ত্রী প্যাট ম্যাকফ্যাডেনের ভাষ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে ৩ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ কাজে যুক্ত হয়েছে এবং নিষ্ক্রিয়তার হার পাঁচ বছরের মধ্যে যৌথভাবে সর্বনিম্ন। তবে সর্বশেষ পরিসংখ্যান স্পষ্ট করে দিয়েছে—বাজেটের আগে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি ও শ্রমবাজার এখন বড় পরীক্ষার মুখে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে

