কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতা হত্যার প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে কর্মসূচি পালন করছে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। কোটা সংস্কারের আন্দোলনে শরিক হয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্তরা। মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক আসিফ নজরুলসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ গ্রহণ করেছেন।
বিকেলে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের আয়োজনে এক প্রতিবাদী মিছিলের আয়োজন করা হয়। এতে বাঁধা দিয়েছে পুলিশ। রাজধানীর গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মিছিলটি গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট থেকে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক যাওয়ার কথা ছিল। পুলিশি বাঁধায় আগাতে না পেরে জিরো পয়েন্টেই অবস্থান নেন তারা। এ সময় তারা রাস্তায় বসে প্রতিবাদ জানান। পুলিশের সঙ্গে বাকবিতন্ডার ঘটনাও ঘটে। প্রতিবাদী গানের মিছিলের আয়োজকেরা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র-জনতা হত্যা, নির্যাতন, গণগ্রেপ্তার ও হামলা-মামলা ইত্যাদির প্রতিবাদেই এমন আয়োজন করা হয়েছে।
এদিকে কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে “অভিভাবকদের মৌন অবস্থান” কর্মসূচি পালনের কর্মসূচি দিয়েছিলেন অভিভাবকরা। কর্মসূচিতে অংশ নিতে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক গেটের পাশে জড়ো হতে শুরু করেন অভিভাবকরা। তবে এর আগে থেকে ঢাকা মেডিকেলের প্রশাসনিক ব্লক গেইট ও জরুরি বিভাগের গেইটের সামনে অবস্থান নেয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ। অভিভাবকরা জড়ো হতে থাকলে প্রথমেই বাঁধার সম্মুখীন হন তারা। পুলিশ তাদেরকে সরে যেতে বললে অস্বীকৃতি জানান তারা। তবে এক পর্যায়ে তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের গেইটের ভিতর ঢুকতে দেয়া হয়।
এ সময় নারী অধিকার আন্দোলনের সভানেত্রী সীমা দত্ত বলেন, আন্দোলনে আহত হয়ে যেই সন্তানেরা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে তাদেরকে আমরা দেখতে এসেছি। পুলিশ আমাদেরকে সেখানে যেতে দিচ্ছে না। শত শত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উনারা বলছেন আমরা
এখানে দাঁড়াতেও পারবো না। আমাদেও ছেলেমেয়েরা মারা গেছে, আহত হয়েছে।
দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ। ‘হত্যা, অবৈধ আটক ও নির্যাতনের বিচার চাই’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে তারা মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি পালন করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে মোট ১১ দফা দাবি পেশ করা হয়। দাবির কথা তুলে তারা বলেন, হত্যাকান্ডে জড়িতরা যে পদেই থাকুক না কেন তাদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি, ছাত্রলীগ, যুবলীগের কর্মী যারা গুলি করেছে তাদের বিরুদ্ধে সঠিক ও স্বচ্ছ তদন্ত ও সঠিক বিচার হতে হবে। প্রতিটি হত্যাকান্ডে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অস্ত্র ব্যবহার এবং বল প্রয়োগের বিষয়ে জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ বিশেষজ্ঞের অধীনে স্বাধীন, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান তারা।
সূত্রঃ দ্য মিরর এশিয়া
এম.কে
৩১ জুলাই ২০২৪