পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) তৎপরতায় স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রত্যয়ে নয়জন জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছেন। যারা বিভিন্ন সময় জঙ্গিবাদে জড়িয়ে কথিত হিজরতের নামে ঘর ছেড়েছেন।
এরপর থেকেই বিভিন্নস্থানে আত্মগোপণে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। র্যাবের মধ্যস্ততায় তারা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন। দীর্ঘ বিরতির পর সন্তানকে কাছে পেয়ে অশ্রুসিক্ত হয়েছেন বাবা-মা।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর র্যাব সদর দপ্তরে ‘নব দিগন্তের পথে’ শীর্ষক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নয়জন জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেন। এদের মধ্যে ৬ জন জেএমবির এবং ৩ জন আনসার আল ইসলামের সদস্য ছিলেন।
র্যাব জানিয়েছে, আত্মসমর্পণকারী নয়জনের মধ্যে ছয়জন জেএমবি ও তিনজন আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তাঁরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পুনর্বাসনের ব্যাপারে র্যাবের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে আজ তাঁরা ‘আত্মসমর্পণ’ করলেন।
র্যাব বলেছে, এই নয়জন জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। তাঁরা বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়ান। তাঁরা কোথাও নিজেদের আসল নাম-পরিচয় ব্যবহার করতে পারতেন না। সব মিলিয়ে তাঁরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। সবাই নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন। পরে র্যাবের মাধ্যমে তাঁরা আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন। এ ব্যাপারে র্যাব তাঁদের উৎসাহী করে। বিনা শর্তে আত্মসমর্পণের সুযোগ দেয়।
র্যাব জানিয়েছে, স্বাভাবিক জীবনে ফেরার লক্ষ্যে তারা নয় ব্যক্তিকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে। এ ছাড়া তাঁরা পুনরায় যাতে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে না পড়েন, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি অব্যাহত থাকবে।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এ সময় মন্ত্রী ফিরে আসা নয়জনকে তাদের অভিভাবকের হাতে তুলে দেন এবং তাদের পুনর্বাসনের জন্য সহায়তা দেন।
এ সময় আত্মসমর্পণ করা শাওন মুনতাহা ইবনে শওকতের বাবা শওকত রহমান বলেন, অনেক দিন ছেলের মুখে বাবা ডাক শুনিনি। অনেকদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম। শুনেছি শাওন বিয়ে করেছেন, তার সন্তান হয়েছে। ছেলের বউ বা নাতিকে কখনো দেখিনি। অপেক্ষায় ছিলাম কখন তাদেরকে দেখতে পাবো। আজ সে অপেক্ষা কাটলো। ওদের ফিরে পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত।
তিনি বলেন, আমার একটি মেয়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করেছে এবং আমার আরেক ছেলে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল থেকে ডাক্তারি শেষ করে বের হয়েছে। সামাজিকভাবে আমার একটা অবস্থান আছে। আমার সব ছেলে-মেয়ে মেধাবী। কিন্তু হঠাৎ করে আমার ছেলে শাওন পথভ্রষ্ট হয়ে যায়। এটা আমি কখনো বুঝতে পারিনি। অথচ তার পূর্বের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কোনোভাবে সামঞ্জস্য নয়। শাওনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করছিলো।
শাওন অনেকদিন ঘরছাড়া ছিল আমি আমার ছেলের মুখ থেকে বাবা ডাক শুনতে পাইনি। আমি সবসময় স্বপ্ন দেখতাম আমার ছেলে এবং আমার বউমার কোলে বাচ্চার আসবে। এর মধ্যে আমি তাদেরকে ফিরে পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত।
ফিরে আসা আবিদা জান্নাত আসমার মা শাহিদা সুলতানা বলেন, আজকে আমার মেয়ে আমার কাছে ফিরে এসেছে। আমরা আসমাকে ছোটবেলা থেকেই অনেক ভালোবাসতাম। কিছুদিন আগে শুনতে পারি, সে যাকে পালিয়ে বিয়ে করেছে তিনি একজন জঙ্গি। তিনি আমার মেয়েকেও জঙ্গি বানিয়েছেন। একজন জঙ্গির মা হওয়া অনেক কষ্টের। আমি সব মা-বাবাকে অনুরোধ করবো, আপনারা আপনাদের সন্তানদের খেয়াল রাখুন, সময় দিন।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
১৪ জানুয়ারি ২০২১
সূত্র: প্রথম আলো