বাবা-মা’র কেউ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বা বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা না হলে তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে জন্মসূত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পাওয়ার বিধান কার্যকর না করতে মার্কিন সংস্থাগুলোকে ট্রাম্প নির্দেশ দিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পাওয়ার যে অধিকার, তা সীমিত করতে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আদেশে নিম্ন আদালতের স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আপিল আদালত।
নিম্ন আদালতের বিচারকের আদেশ স্থগিত চেয়ে জরুরি আবেদন করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন, বুধবার সান-ফ্রান্সিসকো ভিত্তিক নাইনথ ইউএস সার্কিট কোর্ট অব আপিল তা খারিজ করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সীমান্ত টপকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ রুখতে নতুন রিপাবলিকান প্রশাসন বেশ কয়েকটি কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। তার শুরুই হয়েছিল ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে।
শপথ নিয়ে প্রথম দিনই ট্রাম্প বাবা-মা’র কেউ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বা বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা না হলে তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে জন্মসূত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পাওয়ার বিধান কার্যকর না করতে মার্কিন সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
তার এ আদেশ ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের ৪ রাজ্যের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে সিয়াটলভিত্তিক মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট আদালতের বিচারক জন কাফেনর প্রেসিডেন্টের আদেশ কার্যকরে সাময়িক স্থগিতাদেশ দেন।
পরে ট্রাম্পের আইন মন্ত্রণালয় আপিল আদালতে জরুরি আবেদনে বলে, বিচারক কাফেনর তার ক্ষমতা ‘অতিক্রম করে’ দেশব্যাপী স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।
তবে বুধবার সানফ্রান্সিকোর আপিল আদালত ওই যুক্তি খারিজ করে দিয়ে সিয়াটল ডিস্ট্রিক্ট আদালতের স্থগিতাদেশ বহাল রাখে।
মেরিল্যান্ড, ম্যাসাচুসেটস ও নিউ হ্যাম্পশায়ারের বিচারকরা পৃথকভাবে ট্রাম্পের আদেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। মার্কিন আইন মন্ত্রণালয় মেরিল্যান্ড ও ম্যাসাচুসেটসের মামলাগুলোতেও আপিল চালাচ্ছে।
ট্রাম্পের এই আদেশের ফয়সালা শেষ পর্যন্ত মার্কিন সুপ্রিম কোর্টেই হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশের পর এর বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন প্রায় দুই ডজন অঙ্গরাজ্য, অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা একাধিক সংগঠন ও ব্যক্তি আদালতের দ্বারস্থ হন।
তাদের ভাষ্য, ট্রাম্পের আদেশ যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্দশ সংশোধনীর লঙ্ঘন। ওই সংশোধনীতে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া সবাইকে দেশটির নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর প্রথম বাক্যে ‘জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার’ নীতিটি বলবৎ হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্র এবং এর আওতাধীন এলাকায় জন্ম নেওয়া বা আত্মীকৃত সব মানুষ যুক্তরাষ্ট্র এবং তারা যেই রাজ্যে বাস করে সেখানকার নাগরিক।”
এই নীতি অবৈধ অভিবাসীদের জন্য ‘বড় চুম্বক’ এবং এটি কাগজপত্রহীন গর্ভবতী নারীদের সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে এসে সন্তান জন্মদানে উৎসাহিত করে বলে ভাষ্য অভিবাসন বিরোধীদের। অনেকে টিটকারি করে একে ‘বার্থ ট্যুরিজম’ হিসেবেও অভিহিত করে।
সূত্রঃ রয়টার্স
এম.কে
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫