ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইসলামী বক্তা ড. জাকির নায়েক আপাতত বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন না। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে সরকার এ সিদ্ধান্ত নেয়। বৈঠকে জানানো হয়, নির্বাচনের আগে তার আগমন জননিরাপত্তা ও প্রশাসনিক চাপে ফেলতে পারে, তাই বিষয়টি স্থগিত রাখা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ২৮ ও ২৯ নভেম্বর ঢাকায় দুই দিনের এক ইসলামিক কর্মসূচিতে জাকির নায়েককে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা করেছিল। শুধু ঢাকায় নয়, রাজধানীর বাইরেও তার কয়েকটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজনের প্রস্তুতি চলছিল। তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো আশঙ্কা প্রকাশ করে জানায়, তার আগমন ঘিরে বিপুল জনসমাগম ঘটতে পারে, যা নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য প্রয়োজন হবে।
সভায় জানানো হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অধিকাংশ সদস্য ইতোমধ্যে নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত। এই পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব নয়। ফলে সিদ্ধান্ত হয়—নির্বাচনের পর পরিস্থিতি অনুকূলে এলে জাকির নায়েকের সফর পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে, তবে বর্তমান সময়ে নয়।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ঢাকার হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর ভারত সরকার জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে উসকানি ও ঘৃণামূলক বক্তব্যের অভিযোগ তোলে। সেই সময় থেকেই তিনি ভারত ছেড়ে মালয়েশিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। বর্তমানে মালয়েশিয়া সরকার তাকে পুত্রজায়ায় স্থায়ী আবাসনের অনুমতি দিয়েছে।
মঙ্গলবারের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলমসহ বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এদিকে এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশ্লেষক ও নাগরিক সমাজের কেউ কেউ মনে করছেন, ভারত সরকারের চাপের মুখে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক ড. পিনাকী ভট্টাচার্য তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “জনগণ মনে করবে, ইন্ডিয়ার ধমকে ইউনুস সরকার জাকির নায়েককে আসতে দিচ্ছে না। এই বেকুবগুলার হাতে আমরা রাষ্ট্রটারে দিছি, প্যাথেটিক অবস্থা।”
সরকারি মহল বিষয়টি রাজনৈতিক চাপের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় বলে দাবি করলেও, জাকির নায়েকের সফর স্থগিতের এই সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। নির্বাচনের আগে এই ইস্যুটি কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখন সময়ই বলে দেবে।
সূত্রঃ স্যোশাল মিডিয়া
এম.কে

