গ্রীষ্মের চরম তাপদাহ এখন যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বহু দেশে স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। কিন্তু শীতপ্রধান অঞ্চলের আবহাওয়ার জন্য নকশা করা যুক্তরাজ্যের অধিকাংশ ঘরবাড়ি অতিরিক্ত তাপ সহ্য করার ক্ষমতা নিয়ে নির্মিত নয়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বাড়ি গরমের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, যেখানে বৃদ্ধ, ছোট শিশু থাকা পরিবার ও সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে রয়েছে।
শহরাঞ্চলে তাপদাহের প্রভাব আরও তীব্র। অ্যাসফল্ট, ইট ও কংক্রিটের মতো গাঢ় রঙের পৃষ্ঠতল দিনের বেলায় সূর্যের তাপ শোষণ করে এবং রাতে ধীরে ধীরে তাপ ছাড়ে, ফলে গরম দিনে শহর অসহনীয় হয়ে ওঠে এবং রাতেও ঠান্ডা হতে দেরি হয়। এথেন্স, আলজিয়ার্স ও বার্সেলোনার মতো শহরে ইতিমধ্যেই উচ্চ সৌর-প্রতিফলনশীল পৃষ্ঠতল ব্যবহার শুরু হয়েছে, যা সূর্যালোক শোষণ না করে প্রতিফলিত করে শহরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করছে।
লন্ডনের অ্যাপার্টমেন্টে শাটার ও হালকা রঙের বারান্দা সচরাচর দেখা না গেলেও, গরম দেশগুলোতে এগুলো প্রচলিত। শাটার সূর্যের আলো আটকিয়ে ঘরে ছায়া তৈরি করে এবং তাপ ঢোকা রোধ করে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ইংল্যান্ডের প্রায় ৯১% পরিবার জানালা খুলে ঘর ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করে, কিন্তু লন্ডনে মাত্র ১৬% মানুষ শাটার ব্যবহার করেন। রাতে বাইরের তাপমাত্রা কমে এলে জানালা খোলা রাখলে ঘর দ্রুত ঠান্ডা হয়, যা উত্তর ইংল্যান্ডের ৭০% পরিবার করে, কিন্তু লন্ডনে এ হার মাত্র ৬৩%, কারণ শহর ঠান্ডা হতে সময় নেয়।
গাছপালা ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখে। রাস্তার গাছ গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় আশেপাশের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমাতে পারে। যুক্তরাজ্যের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের ৩:৩০:৩০০ নীতিমতে, প্রতিটি বাড়ি থেকে অন্তত তিনটি গাছ দেখা যাবে, এলাকাজুড়ে ৩০% গাছের ছায়া থাকবে, এবং ৩০০ মিটারের মধ্যে একটি জীববৈচিত্র্যময় সবুজ এলাকা বা পার্ক থাকতে হবে। কিন্তু ইংল্যান্ডের প্রায় অর্ধেক শহুরে এলাকায় গাছের ছায়া ১০% এরও কম, আর এক-তৃতীয়াংশ এলাকায় পর্যাপ্ত সবুজ স্থান নেই।
এয়ার কন্ডিশনিং যুক্তরাজ্যে আগে খুব একটা প্রয়োজন ছিল না, কিন্তু তাপদাহ বেড়ে যাওয়ায় এর ব্যবহার এখন বাড়ছে। বর্তমানে ইংল্যান্ডের মাত্র ৩.৬% পরিবার এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করে, যেখানে অর্ধেকেরও বেশি পরিবার শুধু ফ্যান ব্যবহার করে। ফ্যান বাতাস সঞ্চালন করলেও তাপমাত্রা কমাতে পারে না। সরকার প্রথমবারের মতো এয়ার কন্ডিশনার স্থাপনে ভর্তুকি দেওয়ার কথা ভাবছে। একইসঙ্গে, বয়লার আপগ্রেড স্কিমের আওতায় এয়ার-সোর্স হিট পাম্পে ছাড় দেওয়া হচ্ছে, যা শীতে গরম ও গ্রীষ্মে ঠান্ডা—দুই ধরনের সেবা দিতে সক্ষম।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১১ আগস্ট ২০২৫