TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

জামায়াতের উত্থান, বিএনপির দুর্বলতাঃ বাংলাদেশ নিয়ে দিল্লি-ওয়াশিংটনের হিসাব

ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার বক্তব্য এবং কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের সতর্কবার্তা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। শ্রিংলা জামায়াতকে “একটি চিতাবাঘ, যার দাগ বদলায় না” আখ্যা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা ও মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পর্কের কথা স্মরণ করালেও তিনি স্বীকার করেছেন— ক্ষমতায় যেই আসুক, ভারতের সঙ্গে কাজ করতেই হবে।

ভারত-আমেরিকার কৌশল: ঝুলন্ত পার্লামেন্ট:

বিশ্লেষকদের মতে, ভারত-আমেরিকার আসল কৌশল হলো বাংলাদেশে একটি ঝুলন্ত পার্লামেন্ট নিশ্চিত করা। এতে কোনো দলই এককভাবে ক্ষমতায় যেতে পারবে না এবং বিদেশি শক্তির জন্য প্রভাব খাটানো সহজ হবে। জামায়াতকে ঘিরে যে ভারতবিরোধী আবহ তৈরি হচ্ছে, সেটিকে ভারতের কূটনৈতিক মহল ইচ্ছে করেই বাড়িয়ে তুলছে বলে মনে করা হচ্ছে। ভোটাররা জামায়াতকে মূলত ভারতবিরোধী শক্তি হিসেবে দেখছে, আর সেটিই ভারত ব্যবহার করতে চাইছে— একদিকে জামায়াতকে নিয়ন্ত্রণে রাখা, অন্যদিকে বিএনপিকে দুর্বল অবস্থানে ঠেলে দেওয়া।

জামায়াতের উত্থান ও বিএনপির সংকট:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে শিবিরের বড় জয় প্রমাণ করেছে, প্রশাসনিক ও কৌশলগত জায়গায় জামায়াত নিজেদের মানুষ বসাতে সফল হচ্ছে। বিপরীতে বিএনপি এখনও “ট্যাম্পু-বাস স্ট্যান্ড দখল” রাজনীতির ইমেজে আটকে আছে। সরকারের পতনের পর সুযোগ কাজে না লাগানো এবং সিলেটের সাদা পাথর কেলেঙ্কারিতে নিষ্ক্রিয়তা বিএনপির নেতৃত্বের দুর্বলতাকে স্পষ্ট করেছে।

তারেক রহমানের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রে চার্লি কির্ক হত্যাকাণ্ডের পর তার মন্তব্যকে ঘিরে সমালোচনা বিএনপিকে কোণঠাসা করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, তারেকের পরামর্শক মহলও কৌশলগত ব্যর্থতা তৈরি করছে। ফলে ফেব্রুয়ারির সম্ভাব্য নির্বাচনে বিএনপি যে বিরোধী দলে যাবে, সেটি এখন প্রায় নিশ্চিত।

ভারতের দ্বৈত বার্তা:

ভারত একদিকে জামায়াতকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন ইতিহাস তুলে ধরে নৈতিক অবস্থান নিচ্ছে, অন্যদিকে বাস্তব রাজনীতিতে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। ভারতের চোখে জামায়াত হলো এমন এক শক্তি, যাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করলে হুমকি হতে পারে, আবার সীমিত ক্ষমতায় রাখলে ভারসাম্যের সুযোগ তৈরি হবে। এজন্যই ঝুলন্ত পার্লামেন্ট ভারতের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ফলাফল।

আমেরিকার অবস্থান:

যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে পরিবারতন্ত্রভিত্তিক রাজনীতি ভাঙার পক্ষে। তারেক রহমান কিংবা শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই যুক্তরাষ্ট্রও চাইছে একটি ভাঙা রাজনৈতিক ম্যান্ডেট, যেখানে বিএনপি, জামায়াত ও নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে সরকার গঠন করতে হবে। এতে বিদেশি শক্তির প্রভাব খাটানো সহজ হবে।

সামনে কী?

বাংলাদেশের ভোটাররা এখন এন্টি-ইন্ডিয়া আবহে আচ্ছন্ন। এই আবহে জামায়াতকে ভারতবিরোধী শক্তি হিসেবে জনমানসে গ্রহণযোগ্য করে তুলছে। বিএনপির ব্যর্থতা ও নেতৃত্বের দুর্বলতায় সেই সুযোগ আরও বড় হচ্ছে। ফলস্বরূপ, আগামী নির্বাচন ঘিরে ভারত ও আমেরিকার লক্ষ্য অনেকটাই মিলছে— একটি ঝুলন্ত পার্লামেন্ট, যেখানে এককভাবে কেউ শাসন করতে পারবে না, আর বিদেশি কূটনৈতিক খেলার মাঠ খোলা থাকবে।

সূত্রঃ স্যোশাল মিডিয়া

এম.কে
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আরো পড়ুন

অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করল যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশ হতে জাহাজে যাওয়া যাবে হজে

অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. ইউনূসকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির শুভেচ্ছা