মক্কায় গিয়ে আল্লাহর ঘর কাবাকে দেখিয়ে নিজের ক্রিম বিক্রির বিজ্ঞাপন তৈরি করে স্যোশাল মিডিয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েন ‘কাশ্মেরী বিউটি বাই জিনিয়াতের’ সত্ত্বাধিকারী জিনিয়াত। ধর্মীয় অনুভুতি ব্যবহার করে হজ্জে গিয়ে ক্রেতাদের জন্য দোয়া চাওয়া ও সাবান কোরবানির মতো প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
কাশ্মীরি বিউটি বাই জিনিয়াতের’ প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জিনিয়াত জাহান। কোনো প্রকার ল্যাব ছাড়াই, ঘরে বসে নিজের হাতে সাবান, লোশন ক্রিম তৈরি করেন তিনি। যাতে নেই বিএসটিআইয়ের কোনো অনুমোদন।
মসজিদে নববীর ভিডিও দেখিয়ে হাতে লোশন নিয়ে ফেসবুকে লাইভে হাজির হন জিনিয়াত। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে বলেছি আমার পণ্য যে যে নিয়তেই ব্যবহার করে না কেন। তার যেন সমস্ত সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।’ ইন্না ইল্লাহি রাজিউন বলে নিজের সাবানকে কোরবানি করে তার মাগফেরাতও কামনা করেন জিনিয়াত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মান নিয়ন্ত্রিতহীনভাবে তৈরি করা এসব প্রসাধনী ব্যবহারে মুখে ব্রোন, মেছতা ও ঘাসহ হচ্ছে ত্বকের চিরস্থায়ী ক্ষতি। এসব প্রসাধনী ব্যবহারে বাড়ছে স্কিন ক্যান্সারসহ নানা রকমের রোগের ঝুঁকি।
ইউনাইটেড হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তাসনিম খাম বলেন,’এই ধরনের প্রসাধনী ব্যবহারে ত্বকের হচ্ছে মারাত্মক রকমের ক্ষতি। প্রায় প্রতিদিনই এমন রোগী আসছে যারা এসব প্রসাধনী ব্যবহার করে স্কিনের ক্ষতি করে ফেলেছেন।’
ঢাকার আভিজাত শপিংমলে রয়েছে জিনিয়াতের শো রুম। সেখানে গিয়ে দেখা যায় পুরো শো রুমে সাজানো সাবান, ক্রিম, সানস্ক্রিন ক্রিম, কোকোনাট ওয়েলসহ বহু কিছু।
নিয়ম অনুযায়ী এসব পণ্য তৈরি করতে নিতে হয় বিএসটিআই বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি। তার কোনো পণ্যের গায়ে নেই বিএসটিআইয়ের সিল। শুধু তাই নয়, কোনো পণ্যের গায়ে উৎপাদন বা মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখও নেই। এমন পণ্য বাজারজাতে রয়েছে শাস্তির বিধান।
বিএসটিআইয়ের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজুল হক বলেন, ‘সাবান, ক্রিম তৈরি করে বাজারজাত করতে অবশ্যই বিএসটিআইয়ের অনুমোদন লাগবে। কেউ অনুমোদনবিহীন পণ্য তৈরি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরেমহাপরিচালক (অতি. সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেন, ‘অনলাইনে বিক্রি হওয়া এসব পণ্য কিনতে ক্রেতাদের সাবধান হতে হবে। এসব পণ্য সামগ্রী ব্যবহারে নানা রকমের ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে। আমাদের কাছেও এমন অনেক অভিযোগ এসেছে।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে জিনিয়াতের শো রুম গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে কথা হয় প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং অফিসার মাহাদির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সাবানটি ত্বকের জন্য অনেক বেশি ভালো কাজ করে।’
বিএসটিআইয়ের অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছু আছে, কিছু নেওয়া হচ্ছে।’ তবে কোথা থেকে অনুমোদন তা স্পট করে বলতে পারেননি তিনি।
বর্তমান সময়ে অনলাইনে জমজমাট ‘কাশ্মেরী বিউটি বাই জিনিয়াতের’ মত এমন বহু নামধারী প্রতিষ্ঠান। যারা প্রতিনিয়তই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাজির হন নানা রকমের পণ্য নিয়ে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়া এই ধরনের কোনো পণ্য ব্যবহার না করার আহব্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এম.কে
০৪ ডিসেম্বর ২০২৩