বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এবং বহুল প্রতীক্ষিত তালিকা—টাইম ম্যাগাজিনের ‘১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তি ২০২৫’-এর তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের গর্ব, নোবেল বিজয়ী, সমাজ ব্যবসার পথিকৃৎ ড. মুহাম্মদ ইউনুস। এই তালিকায় এলন মাস্ক, কেয়ার স্টারমার এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো প্রভাবশালী নামের পাশে উঠে আসা ড. ইউনুসের নাম আন্তর্জাতিক মহলে যেমন আলোচনার জন্ম দিয়েছে, তেমনি ভারতীয় মিডিয়ায় তৈরি করেছে এক ধরনের অস্বস্তি।
বিভিন্ন ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দেখা গেছে, ড. ইউনুসের এই সম্মানপ্রাপ্তিকে কেন্দ্র করে ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাবশালী অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে বলছেন, মোদি সরকার বৈশ্বিক নেতৃত্বে পিছিয়ে পড়ছে, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার এক ক্ষুদ্র রাষ্ট্র বাংলাদেশের একজন ব্যক্তি বিশ্বমঞ্চে নতুন উচ্চতায় উঠে যাচ্ছেন।
ভারতের কয়েকটি জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশন চ্যানেলে এমন ভাষ্যও উঠে এসেছে—“মোদি ইউনুসের কাছে হেরে গেছেন।” একজন ভারতীয় বিশ্লেষক মন্তব্য করেন, “টাইম ম্যাগাজিন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব নির্বাচনে নেতৃত্ব, সামাজিক প্রভাব ও মানবিক অবদানের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এ দিক থেকে দেখলে ইউনুস যে কতটা এগিয়ে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।”
ড. ইউনুসঃ বিশ্ব মানবতার প্রতিচ্ছবি
ড. মুহাম্মদ ইউনুস কেবল একজন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদই নন, বরং সামাজিক ব্যবসা ও ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের মাধ্যমে লক্ষ কোটি মানুষের জীবনে আলো ছড়ানো এক যুগান্তকারী পথিকৃৎ। বিশ্বজুড়ে তিনি পরিচিত “ব্যাংকার টু দ্য পোর” নামে। ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভের পর থেকে আজ অবধি তিনি মানবকল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন নীরবে, অথচ দারুণ প্রভাবশালীভাবে।
টাইম ম্যাগাজিন তাদের প্রতিবেদনে ড. ইউনুসকে নিয়ে লেখে—
“তিনি শুধু অর্থনীতির ভাষায় কথা বলেন না, তিনি বলেন মানুষের ভাষায়; দারিদ্র্য যেখানে শেষ হয়, সেখানেই শুরু হয় তার দর্শন।”
ভারতের নেতৃত্ব বনাম দক্ষিণ এশিয়ার রূপরেখাঃ
বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনাটি দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃত্ব কাঠামো ও ভাবমূর্তির ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। ভারত, যারা দীর্ঘদিন ধরে নিজেদেরকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান পরাশক্তি হিসেবে দাবি করে এসেছে, তারা যদি মানবকল্যাণে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা নিতে না পারে, তবে শুধুমাত্র সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তিই যথেষ্ট নয়।
অনেক ভারতীয় নাগরিকও সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়ে বলেন—
“আমাদের উচিত ইউনুসের মতন মানবিক নেতাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলা। রাজনীতি নয়, এখন দরকার মানবিক নেতৃত্ব।”
ভবিষ্যতের পথনির্দেশঃ
ড. ইউনুসের অন্তর্ভুক্তি বিশ্বকে মনে করিয়ে দেয়, নেতৃত্ব মানে শুধু পদমর্যাদা নয়, বরং মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনার ক্ষমতা। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের নাগরিক হয়েও তিনি যে অবস্থানে পৌঁছেছেন, তা বিশ্বের জন্য এক প্রেরণার উৎস।
এটি কেবল টাইম ম্যাগাজিনের একটি স্বীকৃতি নয়—এটি এক অর্থে দক্ষিণ এশিয়ার আত্মবিশ্বাসের পুনঃপ্রতিষ্ঠাও।
এম.কে
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৮ এপ্রিল ২০২৫