TV3 BANGLA
বাংলাদেশযুক্তরাজ্য (UK)

টিউলিপ সিদ্দিকের খালার মৃত্যুদণ্ডঃ ছাত্র আন্দোলনে হত্যার নির্দেশ দেওয়ায় শেখ হাসিনার ফাঁসির ঘোষণা

বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ছাত্র আন্দোলন দমনে ব্যাপক সহিংসতা চালানোর অভিযোগে এই রায় ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে আগস্টের সংঘর্ষে প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়। শিক্ষার্থীদের ওপর ড্রোন, হেলিকপ্টার ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়ার প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন।

রায় ঘোষণার সময় পুরো আদালতকক্ষ দর্শকে ভর্তি ছিল এবং ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায় সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে জাতীয় টেলিভিশনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও বড় পর্দায় শিক্ষার্থীরা রায় দেখেন। বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম মুর্তজা মজুমদার রায়ে উল্লেখ করেন—এই হামলা ছিল “বিস্তৃত, পরিকল্পিত এবং সুনির্দিষ্টভাবে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে পরিচালিত”, যেখানে শেখ হাসিনার “সরাসরি আদেশ, প্ররোচনা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতা” স্পষ্ট।

ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত ফোন রেকর্ড, অডিও-ভিডিও ক্লিপ এবং সাক্ষ্যভাষ্যে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা নিরাপত্তা বাহিনীকে “মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র, ড্রোন ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে প্রতিবাদকারীদের দমন করতে” নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রসিকিউটর ময়নুল করিম জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা তাদের রেকর্ড মুছে ফেললেও অপরাধের প্রমাণ লোপাট করতে পারেননি। প্রাক্তন পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনও স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছেন যে তিনি শেখ হাসিনার নির্দেশেই অভিযানে নেতৃত্ব দেন।

গত বছরের জুলাইয়ে সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলেও পরে তা দেশব্যাপী সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে ভারতে পালিয়ে যান, একই দিন ঢাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ৫২ জন নিহত হন—যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় শেখ হাসিনা এক অডিও বার্তায় দাবি করেন যে এটি ‘একটি বেআইনি, অনির্বাচিত সরকারের সাজানো রায়’ এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন—“আল্লাহ আমার জীবন দিয়েছেন, কেবল তিনিই শেষ করতে পারেন। আমি জনগণের সেবাই করে যাব।”

একই সঙ্গে শেখ হাসিনার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও নিলামে তোলার সিদ্ধান্তও বিবেচনায় রয়েছে, যার অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে বিতরণ করা হবে। তার আইনজীবী যুক্তি দিয়েছেন, পুলিশের গুলি ছিল আত্মরক্ষার অংশ, কারণ কিছু জায়গায় সহিংসতা বেড়ে গিয়েছিল।

রায়ের আগে ঢাকাজুড়ে টানটান উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানীতে ৩২টি বোমা বিস্ফোরণ, বাসে অগ্নিসংযোগসহ নানান নাশকতার ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আওয়ামী লীগ–সমর্থকদের গ্রেপ্তার করেছে। সুপ্রিম কোর্ট ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তায় সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দেয়। তবে রায়ের পর ধানমন্ডিতে হাসিনার সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে; ইটপাটকেল নিক্ষেপে একজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন।

এদিকে যুক্তরাজ্যের লেবার এমপি টিউলিপ সিদ্দিক—যিনি শেখ হাসিনার ভাগ্নি—বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি নিজেও বাংলাদেশে অনুপস্থিতিতে দুর্নীতির মামলায় বিচারাধীন, যেখানে অভিযোগ রয়েছে যে তিনি খালাকে প্রভাবিত করে পরিবারের জন্য মূল্যবান প্লট জোগাড় করেছিলেন। তার আইনজীবীরা এটিকে ‘রাজনৈতিক প্রতিশোধমূলক মামলা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ এখন চরম রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে। বিএনপি প্রবলভাবে এগিয়ে আছে, আর আওয়ামী লীগ সব রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ। এ রায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যার প্রভাব আগামী নির্বাচনে গভীরভাবে পড়বে বলে বিশ্লেষকদের মত।

সূত্রঃ দ্য টেলিগ্রাফ

এম.কে

আরো পড়ুন

‘ব্রিটিশ গুয়ান্তানামো বে’ তৈরি করবে হোম অফিসের বর্ডার বিল

ভারতের সঙ্গে আমাদের সমস্যা চলছে, কারণ ছাত্ররা যেটা করেছে, সেটা তারা পছন্দ করেনিঃ ড. ইউনুস

২৯ ডিসেম্বর লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া