টিকটকে যুক্তরাজ্যের রিফর্ম ইউকে দলের নেতা নাইজেল ফারাজকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে আফগান নাগরিক ফায়াজ খানকে দোষী সাব্যস্ত করেছে লন্ডনের সাউথওয়ার্ক ক্রাউন কোর্ট। ছোট নৌকায় করে ফ্রান্স থেকে ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২৬ বছর বয়সী ফায়াজ খান গত বছরের অক্টোবর মাসে একটি টিকটক ভিডিওতে ফারাজকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “ইংলিশম্যান নাইজেল, আমার সম্পর্কে বাজে কথা বলো না… আমি ইংল্যান্ডে আসছি, পপ, পপ, পপ।” ভিডিওতে তিনি বন্দুকের ভঙ্গি করেন, ক্যামেরায় মাথা ঠোকেন এবং মুখে থাকা একে-৪৭ ট্যাটুর দিকে ইঙ্গিত করেন— যা হুমকিকে আরও ভয়ানক করে তোলে।
আদালতে অভিযোগকারী আইনজীবী পিটার র্যাটলিফ বলেন, খান টিকটকে বিশাল অনুসারী তৈরি করেছিলেন এবং তার ভিডিওগুলো লাখো মানুষ দেখত। তিনি বলেন, “এই হুমকি কোনো মজা নয়, বরং স্পষ্টভাবে ভয় দেখানো ও মারাত্মক বার্তা।”
ফারাজ আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, “ভিডিওটি সত্যিই ভীতিকর ছিল। সে বন্দুকপ্রেমী এবং আগ্নেয়াস্ত্রের কাছে থেকেছে। আমি সত্যিই ভয় পেয়েছিলাম।” ফারাজের মতে, খান সরাসরি ইংল্যান্ডে এসে তাকে গুলি করার হুমকি দিয়েছিল।
ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন ফারাজ ইউটিউবে “দ্য জার্নি অব অ্যান ইলিগ্যাল মাইগ্র্যান্ট” শিরোনামে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন, যেখানে খানকে দেখিয়ে তিনি বলেন, “যুবক বয়সী পুরুষেরা আমাদের দেশে প্রবেশ করছে, যাদের সম্পর্কে আমরা অল্পই জানি।” এর প্রতিক্রিয়াতেই খান ফারাজকে উদ্দেশ্য করে হুমকিসূচক ভিডিওটি তৈরি করেন।
পুলিশ জানায়, খান ফ্রান্স থেকে ছোট নৌকায় চড়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের পুরো যাত্রাই লাইভস্ট্রিম করেছিলেন। ৩১ অক্টোবর তিনি যুক্তরাজ্যে পৌঁছালে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে খান বলেন, “আমার কখনো তাকে হত্যার ইচ্ছা ছিল না। আমি ভিডিওতে সবসময় এমন আচরণ করি— এটা আমার স্টাইল। আমি মজা করছিলাম।” তবে আদালত তার ব্যাখ্যা গ্রহণ করেনি।
অভিযোগকারী আইনজীবী বলেন, “যে ব্যক্তি নিজের মুখে একে-৪৭ ট্যাটু করে, সে স্পষ্টতই অস্ত্রের প্রতি আসক্ত এবং এই ভিডিওর মাধ্যমে ভয় প্রদর্শন করতে চেয়েছে।” অন্যদিকে, প্রতিরক্ষা আইনজীবী চার্লস রয়েল দাবি করেন, খান “বোকামিপূর্ণ, হাস্যকর ও মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা” করেছেন, প্রকৃত হুমকি দেননি।
দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা জুরি বোর্ডের আলোচনার পর ১০–২ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আগামী মঙ্গলবার ফায়াজ খানের বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি এবং যুক্তরাজ্যে অবৈধ প্রবেশের অভিযোগে সাজা ঘোষণা করা হবে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১০ অক্টোবর ২০২৫