TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

ডিজিটাল আইডি নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে, ৩০ লাখ ব্রিটিশ নাগরিকের পিটিশন জমা

যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছে, বহুল আলোচিত ডিজিটাল আইডি প্রকল্পটি ২০২৮ সালের মধ্যে চালু করা হবে, তবে এটি পূর্ববর্তীভাবে প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ, প্রকল্প চালুর পর যারা নতুন চাকরির জন্য আবেদন করবেন, কেবল তাদের জন্যই এটি বাধ্যতামূলক হবে। প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টার্মার জানিয়েছেন, এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো ছায়া অর্থনীতিতে (shadow economy) অবৈধভাবে কাজ করা রোধ করা এবং কর্মসংস্থানে স্বচ্ছতা আনা।

ডিজিটাল আইডি ব্যবহারে কোনো নাগরিককে বাধ্য করা হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “হাসপাতালে যাওয়া বা স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার জন্য কখনো আইডি দেখাতে হবে না। যারা ডিজিটাল আইডি নিতে চান না, তারা নেবেন না— শুধুমাত্র চাকরির অধিকার প্রমাণের ক্ষেত্রে এটি প্রয়োজন হবে।” সরকার আশা করছে, সংসদের চলতি মেয়াদের মধ্যেই প্রকল্পটি কার্যকর হবে। তবে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া মিশ্র; ইতোমধ্যে প্রায় ৩০ লাখ নাগরিক ডিজিটাল আইডি বাতিলের দাবিতে পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, ডিজিটাল আইডি মানুষের জীবন সহজ করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, বাড়ি কেনা, কিংবা ভাড়া নেওয়ার মতো কাজগুলোতে বারবার আলাদা পরিচয়পত্র প্রদর্শনের প্রয়োজন হবে না। এতে সময় ও অর্থ দুই-ই সাশ্রয় হবে। ন্যাশনাল রেসিডেন্সিয়াল ল্যান্ডলর্ডস অ্যাসোসিয়েশনের নীতি পরিচালক ক্রিস নরিস বলেছেন, “একটি একক আইডি ব্যবস্থা থাকলে ভাড়াটিয়াদের যাচাই প্রক্রিয়া আরও সহজ ও নির্ভরযোগ্য হবে।” স্টার্মার আরও বলেন, এই আইডি ব্যাংক জালিয়াতি কমাতে সাহায্য করবে, কারণ জাল বা চুরি করা নথি ব্যবহার করে কেউ আর সহজে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারবে না।

সরকার জানিয়েছে, ২০২৫ সালের শেষ দিকে প্রকল্পটি নিয়ে জনমত যাচাইয়ের জন্য গণপরামর্শ নেওয়া হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনমত এখনও বিভক্ত। প্রযুক্তি বিশ্লেষক র‍্যাচেল কোল্ডিকাট বলেন, “কেউ কেউ এটি প্রযুক্তিগত অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ মনে করছেন এটি বাড়তি প্রশাসনিক ঝামেলা।” তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাজ্যের উদীয়মান বেসরকারি ডিজিটাল আইডি খাত সরকার-নেতৃত্বাধীন প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এদিকে, নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো গোপনীয়তা লঙ্ঘনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। বিগ ব্রাদার ওয়াচের প্রধান সিলকি কার্লো বলেছেন, “ডিজিটাল আইডি কখনোই বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত নয়। জনগণের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও গোপনীয়তা রক্ষায় এটি বাতিল করা জরুরি।” তবে প্রধানমন্ত্রী স্টার্মার স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, “এই প্রকল্প কখনোই নজরদারির হাতিয়ার হবে না।” তিনি বলেন, নাগরিকদের তথ্য নিরাপদভাবে এনক্রিপশন প্রযুক্তির মাধ্যমে সংরক্ষিত থাকবে এবং তা ব্যবহারকারীর নিজস্ব ডিভাইসেই থাকবে, কোনো কেন্দ্রীয় সার্ভারে নয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যে ডিজিটাল আইডি ব্যবহার করছে। ভারত, ডেনমার্ক ও সিঙ্গাপুরে এটি সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। চীনেও এ বছর একটি স্বেচ্ছাভিত্তিক ডিজিটাল আইডি চালু হয়েছে, যদিও সেটি পুলিশের নজরদারির আশঙ্কায় বিতর্কের মুখে। যুক্তরাজ্যে এই প্রকল্পের তত্ত্বাবধান এখন ক্যাবিনেট অফিসের অধীনে থাকবে, যা আগে বিজ্ঞান, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্বে ছিল।

সূত্রঃ বিবিসি

এম.কে

আরো পড়ুন

পাঁচ সপ্তাহ বয়সে ‘খারাপভাবে’ কোভিড আক্রান্ত হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে রোমি

ইলোন মাস্কের পর এবার রাশিয়ান অলিগার্চদের উপর কিশোর হ্যাকারের নজরদারি

অনলাইন ডেস্ক

ইইউ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে ‘যুব অভিজ্ঞতা’ স্কিম ১২ মাসের ওয়ার্ক ভিসা চালুর সম্ভাবনা