ব্রিটেনের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় যুগান্তকারী রূপান্তরের অংশ হিসেবে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা (NHS) আগামী ১০ বছরের জন্য একটি বিস্তৃত পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এতে স্বাস্থ্যসেবাকে আরও ডিজিটাল, দ্রুতগামী ও রোগীবান্ধব করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
এই পরিকল্পনার অন্যতম আকর্ষণ NHS অ্যাপকে ‘পকেটের ডাক্তার’-এ রূপান্তর। ‘My NHS GP’ নামের একটি নতুন ফিচার রোগীর উপসর্গ বিশ্লেষণ করে দিকনির্দেশনা দেবে এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিংয়ের সুযোগ দেবে। এই পরিবর্তন তিন বছরে ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয়ের আশা করা হচ্ছে।
রোগীরা এখন থেকে NHS অ্যাপে ‘My Choices’ অংশে গিয়ে নিজের চিকিৎসাকেন্দ্র বেছে নিতে পারবেন। অ্যাপে থাকবে অপেক্ষার সময়, সেবার মান ও রোগী সন্তুষ্টির রেটিংসহ সহজবোধ্য ‘লিগ টেবিল’। এতে রোগীরা আরও স্বচ্ছ ও তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
২০২৮ সালের মধ্যে প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি ‘একক ডিজিটাল রেকর্ড’ চালু করা হবে, যেখানে সমস্ত স্বাস্থ্যতথ্য থাকবে। এই রেকর্ডে GP, নার্স, ফার্মাসিস্টসহ সব স্বাস্থ্যকর্মী অ্যাক্সেস পাবেন, যা সেবার মান ও গতি দুটোই বাড়াবে।
GP ছাড়াই এখন থেকে রোগীরা মানসিক স্বাস্থ্য, পায়ের সমস্যা, শ্রবণ পরীক্ষা এবং ব্যথাজনিত সমস্যার জন্য নিজে থেকেই NHS অ্যাপে সেবা নিতে পারবেন। এতে অপেক্ষার তালিকা ছোট হবে এবং GP-দের চাপ হ্রাস পাবে।
শিশুদের স্বাস্থ্য রেকর্ডের জন্য ব্যবহৃত ‘লাল বই’ এখন থেকে থাকবে ডিজিটাল ফর্মে। পিতামাতারা NHS অ্যাপে তাদের সন্তানের ভ্যাকসিন, খাদ্যাভ্যাস ও ঘুম সংক্রান্ত তথ্য পেতে পারবেন।
হাসপাতালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়ানো হবে। AI দিয়ে চিকিৎসকদের প্রশাসনিক কাজ স্বয়ংক্রিয় করা হবে এবং রোগ নির্ণয়ে সহায়তা দেওয়া হবে। জেনেটিক স্ক্রিনিংকে নবজাতকদের জন্য সার্বজনীন করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
২০২৯ সালের মধ্যে ১০ লাখ মানুষকে দেওয়া হবে ‘ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বাজেট’, যাতে তারা নিজেদের চিকিৎসা পছন্দ অনুযায়ী পরিচালনা করতে পারেন। ২০৩৫ সালের মধ্যে এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
দেশজুড়ে ২৫০ থেকে ৩০০টি কমিউনিটি হেলথ হাব চালু হবে, যেখানে এক ছাদের নিচে GP, নার্স, মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, ফিজিও ও সামাজিক কর্মীরা মিলিতভাবে সেবা দেবেন। এগুলো সপ্তাহে ছয় দিন, দিনে ১২ ঘণ্টা খোলা থাকবে।
রেফারালের ১৮ সপ্তাহের মধ্যে ৯২% রোগীর চিকিৎসা শুরুর পুরনো টার্গেট ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। একইসঙ্গে করিডোরে রোগী রাখার ‘লজ্জাজনক দৃশ্য’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার।
৮৫টি বিশেষায়িত মানসিক স্বাস্থ্য জরুরি বিভাগ চালুর জন্য ১২০ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যাতে মানসিক রোগীরা A&E-তে গিয়ে হয়রানির শিকার না হন। স্কুল ও যুব-কেন্দ্রগুলোতেও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বাড়ানো হবে।
ওজন কমাতে ইনজেকশনের অ্যাক্সেস বাড়ানো, স্বাস্থ্যসচেতনতা বাড়াতে ‘হেলথ রিওয়ার্ড স্কিম’ চালু এবং শিশুদের জন্য জাঙ্ক ফুডের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধসহ একাধিক স্বাস্থ্যনীতি বাস্তবায়ন করা হবে। উচ্চ ক্যাফেইনযুক্ত ড্রিংকস ১৬ বছরের নিচে বিক্রি নিষিদ্ধ হবে।
NHS-এ আরও কর্মী যোগ করার জন্য নার্সিং অ্যাপ্রেন্টিসশিপ ও মেডিকেল স্কুলের আসন বাড়ানো হবে। ২০৩৫ সালের মধ্যে বিদেশি নিয়োগ ১০%-এর মধ্যে সীমিত রাখা হবে এবং NHS থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া দন্ত চিকিৎসকদের বাধ্যতামূলকভাবে তিন বছর NHS-এ কাজ করতে হবে।
সরকারি ভাষ্যে বলা হয়েছে, এই পরিকল্পনা NHS-কে আধুনিক যুগে উপযোগী করে গড়ে তুলবে এবং রোগীদের জন্য একটি দ্রুততর, সহজতর ও মানবিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৪ জুলাই ২০২৫