রাজধানীর হাতিরঝিলে মহানগর প্রকল্পের একটি ভবনের ফ্ল্যাট নিয়ে দ্বন্দ্বে মারধরে হত্যা করা হয়েছে দীপ্ত টিভির সম্প্রচার বিভাগের কর্মকর্তা তানজিল জাহান ইসলাম তামিমকে। পরিবারের অভিযোগ, এর পেছনে আছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (গতকাল সোমবার সাময়িক বরখাস্ত) উপপরিচালক মোহাম্মাদ মামুন ও আবাসন কোম্পানি প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজের মালিক শেখ রবিউল আলম। মামুন ডিএমপির সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের দাপট দেখাতেন।
গত বৃহস্পতিবার মহানগর প্রকল্পের ডি ব্লকের একটি বাড়ির ফ্ল্যাটে মারধরে মারা যান ভবনটির জমির মালিকের ছেলে ও দীপ্ত টিভির কর্মী তামিম। এ ঘটনায় মামুন, শেখ রবিউলসহ ১৬ জনকে আসামি করে হাতিরঝিল থানায় হত্যা মামলা করেন তামিমের বাবা। এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, প্রাথমিকভাবে এই হত্যার পেছনে মামুন ও শেখ রবিউলের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তবে এ দুজন গ্রেপ্তার হননি।
মামুন ওই ভবনেরই একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ওই ফ্ল্যাটে তালা ঝুলছে। শেখ রবিউল বিএনপি নেতা। ওই ঘটনায় বিএনপি তাকে শোকজ করার তিন দিন পর গতকাল জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে তার সদস্য পদ স্থগিত করেছে।
নিহত তামিমের পরিবার ও অন্যান্য সূত্র জানায়, সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের এক আত্মীয় এক সময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে ছিলেন। সেই সূত্র ধরে হারুনের দাপট দেখাতেন মামুন। শেখ রবিউল তার কাজে হারুনের সহযোগিতা পেতে মামুনকে বিনা টাকায় ওই ভবনের একটি ফ্ল্যাটে থাকতে দেন।
গতকাল মহানগর প্রকল্পে গিয়ে জানা যায়, ওই বাড়ি নির্মাণের বিষয়ে তামিমের বাবার সঙ্গে শেখ রবিউলের আবাসন কোম্পানি প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী জমির মালিক পাবেন সাড়ে তিনটি ফ্ল্যাট। কিন্তু আবাসন কোম্পানি দুটি ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেছে। বাকি দেড়টি ফ্ল্যাটের মধ্যে একটি তাদের না জানিয়ে কোম্পানিটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মামুনের শ্বশুরের কাছে বিক্রি করে। তবে ফ্ল্যাটটির অর্ধেক পাওয়ার কথা তামিমদের পরিবারের।
পরিবার সূত্রের অভিযোগ, ওই ফ্ল্যাট দখলকে কেন্দ্র করেই আবাসন কোম্পানির ব্যবস্থাপক আব্দুল জব্বার, মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মামুনসহ কয়েকজন বৃহস্পতিবার সকালে ভবনে ঢুকে তামিমকে মারধর করে গুরুতর আহত করেন। পরে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জানতে চাইলে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার রুহুল কবীর খান বলেন, তামিম হত্যা মামলায় ছয় আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।
এই হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি মামুনকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ডিডি পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত ও প্রত্যাহার করে অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মামুনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
৩ নম্বর আসামি শেখ রবিউলের বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদ স্থগিত করে গতকাল চিঠি দিয়েছে দল।
এম.কে
১৫ অক্টোবর ২০২৪