সারারাত ও সকালের বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে এবার বন্যার পানি প্রবেশ করছে সিলেট নগরীতে। আলোচিত উপশহরের একাংশসহ নগরী ও এর আশপাশের শতাধিক এলাকার মানুষ ইতোমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত ২৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
২০২২ সালের বন্যায় পুরোটাই ডুবেছিল উপশহর। এবার সেই আশঙ্কা করছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে নগরীর সোবহানীঘাট এলাকায় নৌকাযোগে পারাপার হতে দেখা গিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
সকালে দেখা গেছে, সিলেট এম এজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সামনে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন ভবনের নিচতলায় পানি প্রবেশ করেছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া জানিয়েছেন, প্রধান ফটকসহ আশপাশের এলাকা জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় নিচতলার বিভিন্ন স্থানে পানি উঠেছে। এতে ২৬, ২৭ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের রোগীদের সেবা ব্যাহত হচ্ছে। পানির কারণে তিনটি ক্লাস-পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ শিশির রঞ্জন চক্রবর্তী।
সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বলেন, নির্বাচনের আগে বর্তমান মেয়র কথা দিয়েছিলেন তিনি নদী খনন করবেন কিন্তু মেয়রের চেয়ারে বসার পর কাজের গতি শূন্য। কথার ফুলঝুরি না ফুটিয়ে মেয়রকে কাজে মন দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
নগরীর উপশহর এলাকায় দেখা গেছে, প্রধান সড়কের বিভিন্ন অংশে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ, বি, সি, ডি, ই ব্লকসহ কয়েকটি ব্লকের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ব্লকের বিভিন্ন সড়কে হাটু সমান পানি। কোথাও আবার উপরে। ডি ব্লকের ১৪ নম্বর রোড থেকে ভারতীয় দূতাবাস সরিয়ে সোবহানীঘাট এলাকার একটি ভবনে স্থাপন করা হয়েছে। পাশের যতরপুর, তেররতন ছাড়াও নগরীর মেন্দিবাগ, জামতলা, তালতলা, শেখঘাট, কলাপাড়া মজুমদার পাড়া, মেজর টিলা ইসলামপুরসহ বেশ কিছু এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। লোকজন বাসা থেকে বের হতে পারছেন না। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও পানি প্রবেশ করেছে। পানির কারণে রিকশা নিয়ে বাসায় আসা-যাওয়া করছেন বাসিন্দারা।
এদিকে সিলেটে আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত ২৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ জানিয়েছেন, গতকাল রাত ১২টা থেকে আজ সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২০৪ মিলিমিটার, সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ২৮ মিলিমিটার ও ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ১৯ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। সবমিলিয়ে ২৫৩ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে সিলেটে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের আজ দুপুর ১২টার তথ্যমতে, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি গতকাল রোববার কমলেও আজ সোমবার বেড়েছে। সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অপরদিকে, কুশিয়ারার অমলসিদ পয়েন্টে সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় নদীর তীর উপচে পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। শহরের পাশাপাশি আজ সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল অনেক উপজেলায় পানি কমে বিভিন্ন সড়কে যোগাযোগ শুরু হলেও আজ সকাল থেকে আবার বন্ধ হয়ে যায়।
এম.কে
০৩ জুন ২০২৪