TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

ড. ইউনূস সরকারের পাকিস্তান ঘনিষ্ঠতায় ভারতের উদ্বেগ, সীমান্তে বাড়ছে সামরিক তৎপরতা

ভারতীয় গণমাধ্যম ডিএনএ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দেশটি পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে, যা নয়াদিল্লির জন্য নতুন উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারত তার সীমান্ত নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নয়াদিল্লি এখন শুধু নিরাপত্তা জোরদারই করছে না, বরং ঢাকার চারপাশে একধরনের কৌশলগত বেড়ি তৈরি করছে। এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর বামুনি, কিষাণগঞ্জ ও চোপড়ায় তিনটি নতুন গ্যারিসন স্থাপন করেছে ভারত। এর মাধ্যমে ‘চিকেন নেক’ নামে পরিচিত কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডোরকে সুরক্ষিত করা হবে।

‘চিকেন নেক’ হলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিলিগুড়ি শহরের পাশের একটি অতি সংকীর্ণ করিডোর, যা উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যকে দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত রেখেছে। এই ফালি জমিটি সবচেয়ে সরু স্থানে মাত্র ২০ থেকে ২২ কিলোমিটার প্রশস্ত। করিডোরটির এক পাশে নেপাল, অন্য পাশে বাংলাদেশ এবং উত্তরে ভুটান অবস্থিত। অঞ্চলটির দুর্বল ভূরাজনৈতিক অবস্থার কারণে ভারত বিহারের যোগবানি হয়ে নতুন রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে, যা নেপালের বিরাজতনগর হয়ে পশ্চিমবঙ্গের নতুন মাল জংশনের সঙ্গে সংযুক্ত হবে।

প্রতিবেদনটি আরও জানায়, সম্প্রতি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জার ঢাকা সফরের পর ভারত আরও সতর্ক হয়ে উঠেছে। তাঁর সফরে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সংযোগ এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়, যা নয়াদিল্লিতে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

ডিএনএ ইন্ডিয়া বলছে, বাংলাদেশের কিছু সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ভারতের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করে উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন। এর মধ্যে সাবেক বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) এ.এল.এম. ফজলুর রহমান ফেসবুকে লেখেন, “ভারত যদি পাকিস্তানকে আক্রমণ করে, তবে বাংলাদেশের উচিত উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য দখল করা।” তিনি আরও বলেন, চীনের সঙ্গে যৌথ সামরিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা শুরু করা উচিত।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কিছু বক্তব্যও নয়াদিল্লির অস্বস্তির কারণ হয়েছে। মার্চের শেষ সপ্তাহে চীন সফরে গিয়ে তিনি বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ‘স্থলবেষ্টিত অঞ্চল’ এবং বাংলাদেশই এই পুরো অঞ্চলের জন্য একমাত্র ‘সমুদ্রের অভিভাবক’।

এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, “সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত ভারতের পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের সমুদ্রের সঙ্গে সরাসরি কোনো সংযোগ নেই। আমরাই এই অঞ্চলের একমাত্র সমুদ্রের অভিভাবক—এটি চীনা অর্থনীতির সম্প্রসারণের জন্য বিশাল সুযোগ তৈরি করতে পারে।”

ভারতীয় গণমাধ্যম বিশ্লেষণে বলছে, এই ধরনের মন্তব্য ও সাম্প্রতিক কূটনৈতিক দিকনির্দেশনা নয়াদিল্লিকে বাংলাদেশ বিষয়ে নতুন করে কৌশল নির্ধারণে বাধ্য করছে। ড. ইউনূস সরকারের সময় পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে বাড়তি যোগাযোগ এবং সামরিক কর্মকর্তাদের উস্কানিমূলক অবস্থান ভারতের জন্য ভূরাজনৈতিকভাবে একটি সংবেদনশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

সূত্রঃ ডিএনএ ইন্ডিয়া

এম.কে

আরো পড়ুন

কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের সামনে সহিংসতা, তীব্র নিন্দা ঢাকার

দুই ছাত্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগের পরামর্শ, অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে চাপা অস্থিরতা

ইকোনমিস্টের কান্ট্রি অব দ্য ইয়ার-” বাংলাদেশ “