TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

ঢাকায় ক্যাথলিক চার্চে বোমা হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগ কর্মী আটক, তল্লাশি জোরদার

ঢাকার ক্যাথলিক চার্চ ও চার্চ-পরিচালিত একটি স্কুলে ঘরোয়া বোমা হামলার ঘটনায় ২৮ বছর বয়সী এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাকে নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সদস্য বলে শনাক্ত করা হয়েছে। সংগঠনটি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের ছাত্র শাখা ছিল।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তিকে রাজধানীর সেন্ট মেরিজ ক্যাথেড্রাল ও সেন্ট জোসেফ স্কুলে ৭ ও ৮ নভেম্বর সংঘটিত বিস্ফোরণসহ একাধিক ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) যৌথভাবে শহরজুড়ে আরও সন্দেহভাজনদের সন্ধান শুরু করেছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জানিয়েছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় তারা সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের যেকোনো প্রচেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা হবে। ইতিমধ্যে ঢাকার গির্জা ও অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনাগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা মোতায়েন করা হয়েছে।

৭ নভেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে সেন্ট মেরিজ ক্যাথেড্রালের সামনে প্রথম বোমা বিস্ফোরিত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আরেকটি অবিস্ফোরিত বোমা উদ্ধার করে। এর কয়েক ঘণ্টা পর, ৮ নভেম্বর ভোর আড়াইটার দিকে মোহাম্মদপুরের সেন্ট জোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে আরেকটি বিস্ফোরণ ঘটে।

এই হামলাগুলো ঘটে ঠিক সেই সময়ে, যখন বাংলাদেশ ক্যাথলিক বিশপ সম্মেলন খ্রিষ্টজন্ম উৎসবের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন উপলক্ষে জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করছিল, যেখানে সারা দেশ থেকে বিশপ, পুরোহিত ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সদস্যরা অংশ নেওয়ার কথা ছিল।

বাংলাদেশ ক্যাথলিক বিশপ সম্মেলনের সামাজিক যোগাযোগ বিভাগের সম্পাদক ফাদার বুলবুল রেবেইরো বলেন,

“এক মাসের মধ্যে গির্জায় আবার ককটেল হামলার ঘটনা আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করেছে। আমরা জানি না এই হামলার উদ্দেশ্য কী, তবে প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে।”

৮ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন,

“আমরা খ্রিষ্টানরা অল্পসংখ্যক এবং শান্তিপ্রিয় মানুষ। কিন্তু এসব হামলা আমাদের ভয় পাইয়ে দিচ্ছে। আমরা চাই প্রশাসন যেন নিশ্চিত করে যে সংখ্যালঘু খ্রিষ্টানরা নিরাপদে তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করতে পারে।”

এর আগে ৮ অক্টোবর ঢাকার পুরান গির্জা ‘হলি রোজারি চার্চ’-এর গেটে আরেকটি ঘরোয়া বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছিল। ফলে এক মাসে রাজধানীতে তিনটি ক্যাথলিক প্রতিষ্ঠানে হামলা হলো, যা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশন।

সংগঠনের সভাপতি নির্মল রোজারিও ৮ নভেম্বর এক বিবৃতিতে বলেন, “এক মাসে ধারাবাহিকভাবে এই হামলাগুলো কোনোভাবেই কাকতালীয় হতে পারে না। সরকারকে অবশ্যই তদন্ত করে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।”

এখনও পর্যন্ত কোনো সংগঠন এসব হামলার দায় স্বীকার করেনি বা কারণ ব্যাখ্যা দেয়নি। বাংলাদেশে প্রায় ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে খ্রিষ্টানদের সংখ্যা এক শতাংশেরও কম; অধিকাংশ নাগরিক মুসলমান।

২০২৪ সালের আগস্টে টানা ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। বর্তমানে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে।

নতুন সরকার আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে “সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। কারণ, হাসিনা সরকারের পতনের সময় সংগঠনটির সদস্যদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও হামলার অভিযোগ উঠেছিল।

তথ্যমতে জানা যায়, রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকে খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে নিরাপত্তা উদ্বেগ বেড়েছে। গত বড়দিনে ঢাকার একাধিক গির্জায় সামরিক বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই ধর্মীয় প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

সূত্রঃ ই,ডাব্লিউ টি এন

এম.কে

আরো পড়ুন

‘শেখ হাসিনা দিল্লিতে নির্জন বাড়িতে আছেন, সুযোগ নেই বাইরে যাওয়ার’

মেটার এমন কার্যক্রম চলতে থাকলে প্রয়োজনে ফেসবুক বন্ধ করে দেবঃ আরাফাত

নিউজ ডেস্ক

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে হামলা-ভাঙচুর