ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা করেছে সরকার। গতকাল রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সেনানিবাসের বাশার রোডসংলগ্ন উত্তর দিকে অবস্থিত “এম ই এস বিল্ডিং নম্বর–৫৪” কে সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা করা হলো। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে জারি হওয়া এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের পর এই সিদ্ধান্তকে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। ৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দুটি মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা ও জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের মামলায় ২৫ জন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। একই দিন এসব মামলায় ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন।
এরপর গত শনিবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৪ জন বর্তমানে কর্মরত, আর একজন কর্মকর্তা অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (এলপিআর) আছেন। সেনাবাহিনী জানায়, এই কর্মকর্তাদের বিষয়ে আইনগত প্রক্রিয়া চলমান এবং তারা হেফাজতে আছেন।
পরে প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনা কর্তৃপক্ষ চায়, মামলার বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামি কর্মকর্তারা সেনা হেফাজতেই থাকবেন। আদালতের নির্ধারিত তারিখে তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে এবং কার্যক্রম শেষে আবার সেনা হেফাজতে নেওয়া হবে।
এই প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন নতুন তাৎপর্য তৈরি করেছে। যদিও প্রজ্ঞাপনে এই অস্থায়ী কারাগারে কাদের রাখা হবে, তা উল্লেখ করা হয়নি, তবে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাইব্যুনালের পরোয়ানা পাওয়া সেনা কর্মকর্তাদেরই সেখানে রাখা হতে পারে।
আইন মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানায়, সরকার চাইলে যে কোনো ভবনকে “সাবজেল” বা উপকারাগার ঘোষণা করতে পারে এবং সেখানে মামলার আসামিদের রাখা যায়। এর আগেও এমন নজির রয়েছে—২০০৭-০৮ সালের এক-এগারো সরকারের সময় আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সংসদ ভবন এলাকার দুটি বাড়িতে সাবজেল ঘোষণা করে সেখানে রাখা হয়েছিল।
নতুন এই সিদ্ধান্তে সেনানিবাসে আটক থাকা কর্মকর্তাদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন, সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন এই অস্থায়ী কারাগার হয়তো দীর্ঘমেয়াদে বিশেষ বিচারিক ব্যবস্থার অংশ হিসেবেই ব্যবহৃত হবে।
সূত্রঃ প্রথম আলো
এম.কে
১৪ অক্টোবর ২০২৫