ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে।প্রথমবারের মত অকৃষি জমিতে ৪০ বিঘা সিলিং প্রস্তাব করে ‘ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন’ প্রণয়ন হতে যাচ্ছে।
১৪ এপ্রিল ২০২৩ ইংরেজি থেকে দেশে ম্যানুয়াল ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়া যাবেনা।ভূমি উন্নয়ন করের ডিজিটালাইজ সিস্টেম চালু হবে সারা দেশ জোরে।
ভূমি দখলকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে উপযুক্ত শাস্তি ও জরিমানার বিধান রেখে প্রস্তুত করা ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে বলে টিভিথ্রি বাংলাকে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ভূমির অপ্রতূলতার কথা মাথায় রেখে সরকার প্রথমবারের মত অকৃষি জমিতেও সিলিং রাখার বিধান করেছে। প্রাথমিকভাবে ‘ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন’-এ ৪০ বিঘা সিলিং (সর্বোচ্চ সীমা) এর প্রস্তাব করা হয়েছে।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইনে এমন বিধানও রাখা হবে যেন বৃহৎ শিল্প স্থাপনে অকৃষি জমির সর্বোচ্চ সীমা কোনো বাধা না হয়ে দাঁড়ায়।এক্ষেত্রে বিশেষ আবেদনে সরকার অকৃষি জমির ঊর্ধ্বসীমার অতিরিক্ত ভূমিতে শিল্প স্থাপনে অনুমোদন দিতে পারবে। কৃষিজমি সুরক্ষা, অকৃষি জমির সর্বোচ্চ সীমার বিধান, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাসের উদ্দেশ্যে করা ‘ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন’-এর খসড়া আগামী সপ্তাহে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করা হবে।
ভূমিমন্ত্রী এই সময় আরও যোগ করেন, ‘দলিলাদি যার, জমি তার’ এই ভাবনা থেকেই ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। কেউ যত বছরই জোর করে কোনও জমি দখল করে রাখুক না কেন, যথাযথ দলিলাদি ছাড়া বেআইনি দখলদারের মালিকানা এই আইনে কখনই তা স্বীকৃতি দেওয়া হবেনা। আইন প্রণয়নের পর জমি দখল সংক্রান্ত হয়রানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে।প্রসঙ্গত, দলিলাদি বলতে যথাযথ নিবন্ধন দলিল, খতিয়ান সহ আনুষঙ্গিক নথিপত্র বোঝায়।
তিনি আরও বলেন, আগামী পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল ২০২৩ ইংরেজি) থেকে সারা দেশে ক্যাশলেস ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থা চালু করা হবে।ক্যাশলেস ই-নামজারি ব্যবস্থা দেশের বিভিন্ন অংশে পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। নাগরিককে অনলাইনে দাখিলা প্রদান করা হয়েছে প্রায় ৪৫ লক্ষ। অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হয়েছে ৩৭৫ কোটি টাকা যা তাৎক্ষণিকভাবে অটোমেটেড চালান সিস্টেমের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ৫ কোটি ২১ লক্ষের অধিক জমির মালিকানা এবং ৭৫ হাজারের অধিক মৌজা ম্যাপ তথ্য অনলাইনে রয়েছে।এ সিস্টেম থেকে প্রায় ১৩ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা সরকারি রাজস্ব আদায় হয়েছে। ডাক বিভাগ এখন নাগরিকের ঠিকানায় খতিয়ান পৌঁছে দিচ্ছে। এ পর্যন্ত ৩ লক্ষের অধিক খতিয়ান ডাকবিভাগের মাধ্যমে নাগরিকগণ হাতে পেয়েছেন। বিদেশেও এই সেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত নামজারি খতিয়ান যুক্ত হচ্ছে এ সিস্টেমে। কোন খতিয়ান থেকে জমি নামজারি হবার সাথে সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে মূল খতিয়ান হতে ধারাবাহিকভাবে সৃষ্ট নতুন খতিয়ান এর ট্রি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফলে জমি ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আসবে এবং মামলা-মোকদ্দমা কমে যাবে।
ভূমিসচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ জানান ৪ কোটির অধিক হোল্ডিং ডাটা ম্যানুয়াল থেকে ডিজিটালে রূপান্তরিত হয়েছে। ই-রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম-এর সাথে ই-মিউটেশন সিস্টেমের কারিগরি সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। ই-নামজারির সাথে-সাথে হোল্ডিং নম্বরসহ ভূমি উন্নয়ন করও স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত হয়ে যাবে। ১৭টি উপজেলায় এর পাইলটিং হয়েছে।
সচিব আরও জানান, সমগ্র বাংলাদেশের ১,৩৮,০০০ ম্যাপকে ডিজিটালাইজ করাসহ স্যাটেলাইট ইমেজ ক্রয় করা হচ্ছে। এই ম্যাপের উপরে স্যাটেলাইট ইমেজ বসিয়ে প্লট-ভিত্তিক জমির শ্রেণীর একটি তথ্যভাণ্ডার তৈরি হচ্ছে। ২০২৩ সালের মার্চ মাস নাগাদ ১০ হাজার ডিজিটাল মৌজা ম্যাপ ই-নামজারি সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত হচ্ছে। নামজারির সাথে-সাথে এই ডিজিটাল ম্যাপ ও খতিয়ান স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশোধিত হতে থাকবে। ভূমি সেবা অ্যাপ থেকে নাগরিকগণ তাদের জমির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ, অবস্থান ও পরিমাপ তাৎক্ষণিকভাবে পেয়ে যাবেন।
সচিব জানান, ই-নামজারি সিস্টেমের মাধ্যমে প্রতি মাসে অনলাইনে প্রায় ২ লক্ষাধিক নামজারি নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ক্যাশলেস নামজারি সিস্টেম থেকে অনলাইনে আদায়কৃত প্রায় ১৬০ কোটি টাকা তাৎক্ষণিকভাবে সরকারের কোষাগারে জমা হয়েছে।
এম.কে
০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ইংরেজি