ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাজধানী দিল্লি থেকে উত্তর প্রদেশ মীরাটের সেনানিবাস বা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার একটি গোপন ঠিকানায় ‘মুভ’ করানো হয়েছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। দিল্লির কেন্দ্রস্থল থেকে মীরাটের দূরত্ব মোটামুটিভাবে ৮৩ কিলোমিটার, অর্থাৎ ৫০ মাইলের অল্প বেশি।
মীরাট সেনানিবাস এলাকায় একটি আধাসামরিক বাহিনীর (খুব সম্ভবত ‘র্যাফ’ বা র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স) একটি গেস্ট হাউজ বা অতিথিনিবাসে তাকে রাখা হয়েছে বলেও বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
দিল্লিতে শীর্ষ নিরাপত্তা সংস্থার নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছেন, ‘ভিভিআইপি অতিথি’র সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় দিল্লি থেকে তাকে আপাতত সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অক্টোবরের প্রথম দিকেই, মোটামুটি দিন পনেরো আগেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি ইঙ্গিত দিচ্ছেন, যদিও এই ‘মুভ’ নিয়ে বিস্তারিত খুব বেশি কিছু জানা যাচ্ছে না।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা ভারতে এসে নামার পর থেকে কোথায় আছেন বা কীভাবে আছেন তা নিয়ে ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এখন পর্যন্ত একটিবারের জন্যও কিছু জানায়নি। তার এ দেশে অবস্থানের পুরো বিষয়টিই কঠোর গোপনীয়তায় মুড়ে রাখা হয়েছে।
শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানাও তার সঙ্গেই মীরাটে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, যদিও এই বিষয়টি কেউই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে তৈরি মীরাট ক্যান্টনমেন্ট দুইশ’ বছরেরও বেশি পুরনো, এটি নির্মিত হয়েছিল ১৮০৬ সালে। এমনকি ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহেও এই সেনানিবাসের বড় ভূমিকা ছিল।
রাজধানী দিল্লির খুব কাছে অবস্থিত মীরাটের সেনানিবাস আধুনিক ভারতের স্ট্র্যাটেজিক নিরাপত্তার দিক থেকেও খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে সামরিক পর্যবেক্ষকরা বলে থাকেন।
আসলে উত্তর প্রদেশের মীরাট শহরটি দেশের সবচেয়ে উর্বর প্রান্ত, গঙ্গা ও যমুনা নদীর অববাহিকার মধ্যবর্তী এলাকা বা ‘দোয়াবা’তে অবস্থিত। ঐতিহাসিকভাবে মুঘল আমল বা তারও অনেক আগে থেকে এই অঞ্চলটিতে প্রচুর খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়, ফলে রাজস্বও আদায় হয় বিপুল। ব্রিটিশরাও ঠিক এই কারণেই মীরাটে ক্যান্টনমেন্ট স্থাপন করেছিল।
আজকের মীরাট ক্যান্টনমেন্ট এলাকা বর্তমানে অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে, তার ভেতরে বেসামরিক স্থাপনাও অনেক তৈরি হয়েছে। কিন্তু ক্যান্টনমেন্টে এমন অনেকটা অংশ আছে, যেখানে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ। সেনাবাহিনী ছাড়াও বিভিন্ন এলিট ফোর্স বা আধা-সেনা সংস্থারও কার্যালয় আছে সেখানে।
শেখ হাসিনাকে সেনানিবাসের এরকমই একটা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মোড়া ‘সেক্লুডেড’ বা জনবিচ্ছিন্ন এলাকাতেই রাখা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
সূত্রঃ
এম.কে
২২ অক্টোবর ২০২৪