অনেকেই মনে করেন, মানুষের আয়ু মূলত জেনেটিক্স দ্বারা নির্ধারিত। কিন্তু বিজ্ঞানিরা বলেন, খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপনের মতো বিষয়গুলোই আমাদের আয়ু কেমন হবে তা নির্ধারণ করে।
যে ১৩টি অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা দীর্ঘ জীবন লাভ করতে পারি:
১. অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস কমানো
সঠিক পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ এবং দীর্ঘায়ুর ভিতরে একটি নিবির সম্পর্ক রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, একজন মানুষ সাধারণত যতটুক ক্যালরি গ্রহণ করে তার থেকে ১০-৫০% কম গ্রহণে আয়ুষ্কাল অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত ওজন এবং পেটের মেদ উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে পরিমিত খাদ্যাভ্যাস দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, যা তাকে দীর্ঘদিন বাঁচতে সাহায্য করে।
২. বেশি বেশি বাদাম খান
বাদামে রয়েছে প্রোটিন, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ফোলেট, নিয়াসিন এবং ভিটামিন বি-৬ এবং ভিটামিন ই। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, বাদাম হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, প্রদাহ, ডায়াবেটিস, পেটের চর্বি এবং কিছু কিছু সময় ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও উপকারী। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, লোকেরা প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ৩টি বাদাম খায় তাদের অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৯% কম থাকে। সুতরাং প্রতিদিন নিয়ম করে বাদাম খেলে তা আপনাকে স্বাস্থ্যকর রাখবে এবং দীর্ঘদিন বাঁচতে সাহায্য করবে।
৩. হলুদের গুণ
কিছু প্রাণির উপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, নিয়মিত হলুদ খাওয়ার মাধ্যমে দীর্ঘ জীবন লাভ করা যায়। এই মশলায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি যা মস্তিষ্ক, হার্ট এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা বজায় রাখতে পাশাপাশি ক্যান্সার এবং বয়সজনিত রোগ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
৪. প্রচুর উদ্ভিদযুক্ত খাবার খান
বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ জাতীয় খাবার যেমন ফলমূল, শাকসবজি, বাদাম, বীজ, শস্য এবং মটরশুটি খেলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিরামিষভোজীদের অকাল মৃত্যুর হার ১২-১৫% কম থাকে। একই সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে, ক্যান্সার বা হার্ট, কিডনি বা হরমোনজনিত রোগ থেকে মারা যাওয়ার ঝুঁকিও ২৯-৫২% কম থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে মাংস খাওয়ার সঙ্গে অকাল মৃত্যু এবং নির্দিষ্ট কিছু রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৫. শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে দীর্ঘজীবন লাভ
আপনাকে স্বাস্থ্যবান রাখবে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম। এর মাধ্যমে আপনার জীবনে কয়েক বছর যোগ করতে পারেন। প্রতিদিনের ১৫ মিনিটের ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনার অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি ৪% কমে যেতে পারে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ১৫০ মিনিটের বেশি শারীরিক পরিশ্রম করলে অকাল মৃত্যুর হার ২৮% কমে যায়। যারা এর থেকে বেশি পরিশ্রম করেছে তাদের অকাল মৃত্যুর হার ৩৫ শতাংশেরও কম। সুতরাং, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম আপনার জীবনকাল বাড়িয়ে তুলতে পারে।
৬. ধূমপান করবেন না
ধূমপানের কারণে অকাল মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায় এতে সন্দেহ নেই বিজ্ঞানীদের। ধূমপান মানুষের জীবন থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কেড়ে নিতে পারে। যারা কখনও ধূমপান করেন না তাদের তুলনায় ধূমপায়ীদের অকাল মৃত্যুর সম্ভাবনা ৩ গুণ বেশি থাকে। ধূমপান ত্যাগ করা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ব্যক্তিরা ৩৫ বছর বয়সে ধূমপান ত্যাগ করেছেন তাদের জীবনকাল ৪.৫ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। ৬০ বছর বয়সে ধূমপান ছাড়লেও তা আপনাকে ৩.৭ বছর অধিক বাঁচতে সাহায্য করবে।
বাকি উপায়গুলো জানার জন্য চোখ রাখুন টিভিথ্রিতে।
পরের পর্ব থাকছে: মদ্যপানে বাড়বে আয়ু! কফি ও চায়ে মানুষের অয়ুষ্কালে প্রভাব।
সানজানা ফারিহা, মিরপুর, ঢাকা।
৩০ আগস্ট ২০২০
এনএইচটি