অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে দুই ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টা — আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলমকে গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। সরকারের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা হলেও, এখনো কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেননি।
সূত্রের বরাতে জানা যায়, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সরকারে থেকেই দায়িত্ব চালিয়ে যেতে চান এবং তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো আগ্রহ প্রকাশ করেননি। অপরদিকে স্থানীয় সরকার, ক্রীড়া ও যুব উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই পদত্যাগের ইঙ্গিত দিয়েছেন, যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো নেননি।
গত ১৪ আগস্ট সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আসিফ মাহমুদ নিজেই বলেছিলেন, “নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই আমি দায়িত্ব ছাড়ব।” পরে ২৮ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে মাহফুজ আলম বলেন, “দুই মাস ধরে আমি অনিশ্চয়তায় আছি যে আমি কখন নামব, মানে আমি কখন নামব, আমি জানি না।” এই বক্তব্যের পর থেকেই সরকারের ভেতর-বাইরে তাঁদের অবস্থান নিয়ে নতুন জল্পনা শুরু হয়।
সরকারি সূত্র বলছে, উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক পটভূমির প্রতিনিধিদের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে পারস্পরিক সন্দেহ ও চাপ বেড়েছে। এনসিপির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই দুই তরুণ উপদেষ্টাকে সরিয়ে দেওয়ার আলোচনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে।
এনসিপির নেতারা দাবি করেছেন, উপদেষ্টা পরিষদে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধি থাকলেও কেবল ছাত্র প্রতিনিধিদের পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া অন্যায্য। তাঁদের মতে, সরকারের বর্তমান কাঠামোতে তরুণ উপদেষ্টাদের ভূমিকা ছিল সমন্বয় ও সংস্কারের প্রতীক, যা এখন প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
অন্যদিকে বিএনপি প্রকাশ্যে দাবি করেছে, উপদেষ্টা পরিষদ থেকে দলীয় প্রভাবিত ব্যক্তিদের সরিয়ে দিতে হবে। দলটির বক্তব্য, কিছু উপদেষ্টা গোপনে সরকারি সুবিধা ও দলীয় স্বার্থ দুই দিকই রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। এনসিপির পক্ষ থেকেও অভিযোগ উঠেছে, কয়েকজন উপদেষ্টা ভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ স্থাপন করেছেন।
জামায়াতে ইসলামীর একটি সূত্র জানায়, তাঁদের পক্ষ থেকে সরকারের কিছু উপদেষ্টার বিরুদ্ধে “অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রে” জড়িত থাকার অভিযোগ আনানো হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে কারা সরকারের ভেতরে থাকবে আর কারা বাদ পড়বে—তা এখন ক্ষমতাসীন মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে পারে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, এবং ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল বা পদত্যাগের ইঙ্গিত রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন উত্তাপ ছড়িয়েছে।
একাধিক বিশ্লেষক মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এই পরিবর্তনগুলো ক্ষমতার ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে। কেউ কেউ এটিকে আসন্ন নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক শুদ্ধি অভিযান হিসেবে দেখছেন, আবার অনেকে বলছেন, এটি ক্ষমতার ভেতরের গোষ্ঠীসংঘাতেরই প্রকাশ।
এম.কে