15.9 C
London
September 22, 2025
TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

দুই-রাষ্ট্র সমাধান রক্ষায় বিশ্বনেতাদের ঐক্য, বাড়ছে ফিলিস্তিন স্বীকৃতি

বিশ্বজুড়ে ক্রমেই বাড়ছে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার ধারা। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, পর্তুগাল ও যুক্তরাজ্যের পর এবার ফ্রান্সসহ আরও কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে। নিউইয়র্কে সৌদি আরব ও ফ্রান্সের উদ্যোগে দুই-রাষ্ট্র সমাধান নিয়ে আয়োজিত বৈঠকের আগে এ ধারা নতুন মাত্রা পেয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই স্বীকৃতি মূলত প্রতীকী হলেও এর লক্ষ্য হলো দুই-রাষ্ট্র সমাধানের ধারণাকে টিকিয়ে রাখা এবং ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের গাজায় নৃশংস হামলা ও পশ্চিম তীর দখলের নীতির বিরুদ্ধে কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানানো। বিশেষ করে আশঙ্কা বাড়ছে যে, ইসরায়েল পশ্চিম তীরকে দখল করতে পারে কিংবা গাজাকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলে ফিলিস্তিনিদের প্রতিবেশী দেশগুলোয় ঠেলে দিতে পারে।

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবৈধভাবে দখলকৃত ভূমি ইসরায়েল নিজের অন্তর্ভুক্ত করতে পারে না। তাই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া মানে হলো ইসরায়েলকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া যে, দখল করে নেওয়া জমি কখনো বৈধ হবে না।

রাষ্ট্র স্বীকৃতির আইনি ভিত্তি আসে ১৯৩৩ সালের মন্টেভিডিও কনভেনশন থেকে—যেখানে স্থায়ী জনসংখ্যা, নির্ধারিত ভূখণ্ড, কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষমতা ও একটি সরকারকে মৌলিক শর্ত হিসেবে ধরা হয়েছে। যদিও ফিলিস্তিনের বাস্তবতা জটিল, কারণ গাজা এখনও দখল ও সংঘাতের কবলে এবং পশ্চিম তীরের সরকার সীমিত কর্তৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। তবু আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে স্বীকৃতি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।

যুক্তরাজ্যের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি নিজেই বলেছেন, “এটি মাটির বাস্তবতা পরিবর্তন করবে না।” তবে স্বীকৃতির মাধ্যমে দেশগুলো ফিলিস্তিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করতে পারবে, কূটনীতিকরা পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রদূতের মর্যাদা পাবেন এবং দখলকৃত অঞ্চল থেকে ইসরায়েলি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে নৈতিক দায়িত্ব তৈরি হবে।

জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ইতোমধ্যেই ১৪০টির বেশি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এই উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ সপ্তাহ শেষে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বাকি চারটি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো থাকার কারণে ফিলিস্তিন এখনও জাতিসংঘে পূর্ণ ভোটাধিকার পায়নি।

নিউইয়র্কের সম্মেলনে যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার কাঠামো নিয়ে আলোচনা হবে। প্রস্তাবিত ঘোষণায় বলা হয়েছে, গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসনে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না। জাতিসংঘ-নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা বাহিনী অস্থায়ীভাবে নিরাপত্তা বজায় রাখবে এবং পরবর্তীতে যাচাইকৃত ফিলিস্তিনি পুলিশ প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ নেবে।

তবে স্বীকৃতির বিরোধিতাও রয়েছে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মতে, এটি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস হামলার পুরস্কার স্বরূপ। ইসরায়েল আরও দাবি করছে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত, দমনমূলক এবং নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি বারবার ভঙ্গ করেছে। ফলে শান্তির কোনো প্রকৃত অংশীদার নেই।

অন্যদিকে সমালোচকদের একাংশ মনে করেন, দুই-রাষ্ট্র সমাধান এখন কেবল একটি রাজনৈতিক মুখোশ, যার শেকড় ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তিতে। তাদের মতে, ৭ অক্টোবরের ঘটনার পর উভয় পক্ষেই এই সমাধানের প্রতি সমর্থন দ্রুত কমছে। সাম্প্রতিক প্রকাশিত Tomorrow is Yesterday গ্রন্থে আলোচক রবার্ট ম্যালি ও হোসেইন আগা দুই-রাষ্ট্র সমাধানকে “অর্থহীন বিভ্রান্তি” বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের মতে, ইসরায়েলের ওপর বাস্তব চাপ সৃষ্টি না হলে এই স্বীকৃতি “একজন ফিলিস্তিনির জীবনেও কোনো পরিবর্তন আনবে না।”

সূত্রঃ বিবিসি

এম.কে
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আরো পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার স্টেডিয়াম বন্ধঃ এক পাখির ডিমের সুরক্ষায় এক মাসের নিষেধাজ্ঞা

আয়ারল্যান্ড হতে আশ্রয়প্রার্থী ফিরিয়ে নেবে না যুক্তরাজ্যঃ ডাউনিং স্ট্রিট

আর্জেন্টিনার নতুন প্রেসিডেন্ট কট্টরপন্থী পন্থী জাভিয়ের মিলেই