চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হতে চাওয়ায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
এই মামলায় আজ আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি মামুনের বিরুদ্ধে। বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন।
অভিযোগ গঠনের সময় ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় উপস্থিত থাকা মামুন নিজের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ স্বীকার করে ঘটনার সত্য প্রকাশে রাজসাক্ষী হতে চান। তার আইনজীবীর করা আবেদন আদালত গ্রহণ করে।
মামলায় সূচনা বক্তব্যের জন্য ৩ আগস্ট এবং সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৪ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে ছিলেন আমির হোসেন এবং মামুনের পক্ষে ছিলেন যায়েদ বিন আমজাদ।
গত ১৬ জুন ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালকে হাজির হওয়ার জন্য বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয়। সাত দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের সময়সীমা পেরিয়ে গেলে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবীর মাধ্যমেই তাদের পক্ষে শুনানির দিন ধার্য করা হয়।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আবেদন করেন। অপরদিকে, আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী অব্যাহতির আবেদন জানান। শুনানি শেষে আজ অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ১ জুন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়।
মামলার বিচারিক কার্যক্রম সেদিন বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হয়। এরপর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মানবতাবিরোধী মামলাটি দায়ের করা হয়।
এই মামলার পাশাপাশি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা চলমান রয়েছে—একটি গুম-খুন সংক্রান্ত এবং অন্যটি শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে।
চব্বিশের গণআন্দোলন দমন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ও প্রশাসনের অংশ বিশেষ যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তারই বিচারের আওতায় আসছে এই মামলাগুলো। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এবং ২—দুটি ট্রাইব্যুনালেই চলছে এসব অপরাধের বিচার।
সূত্রঃ বাসস
এম.কে
১০ জুলাই ২০২৫