যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকেরা সতর্ক করেছেন—যদি আপনার গলায় ব্লেড দিয়ে কাটার মতো তীব্র ব্যথা হয়, তবে সেটি হতে পারে নতুন ও অতি সংক্রামক কোভিড ভ্যারিয়েন্ট ‘নিম্বাস’ এর লক্ষণ। এই ধরনটি ওমিক্রনের বিবর্তিত রূপ, যার ১৩টি সংক্রমণ ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হয়েছে। এর আগে চীন, সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে এর প্রকোপ দেখা গেছে।
ডা. নাভিদ আসিফ, লন্ডনের জেনারেল প্র্যাকটিসের একজন জিপি, জানিয়েছেন যে নিম্বাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো গলা দিয়ে খাবার গিলতে গেলে পেছনের দিকে ব্লেড দিয়ে কাটা জ্বালাময় ব্যথা।
আরও কিছু লক্ষণ হলোঃ
*মুখগহ্বরের পেছনের অংশে লালচে ভাব।
*গলার গ্রন্থি ফুলে যাওয়া।
*জ্বর, মাংসপেশিতে ব্যথা ও সর্দি জমা।
তবে ডা. আসিফ বলেন, “উপসর্গ ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হতে পারে, তাই সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।”
NHS-এর মতে, সাধারণ কোভিড লক্ষণের মধ্যে রয়েছেঃ শরীরে উচ্চ তাপমাত্রা, একটানা কাশি, ঘ্রাণ বা স্বাদের অনুভূতি হারানো, শ্বাসকষ্ট ও বমি বমি ভাব।
যদিও এখন পর্যন্ত মাত্র ১৩ জনের মধ্যে নিম্বাস শনাক্ত হয়েছে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রকৃত সংখ্যাটি আরও বেশি হতে পারে কারণ দেশে কোভিড পরীক্ষার হার অনেক কমে গেছে।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থার (UKHSA) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে কোভিড সংক্রমণের হার মার্চ মাসের তুলনায় ৯৭ শতাংশ বেশি। ফলে গ্রীষ্মে বড়সড় সংক্রমণের ঢেউ আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রফেসর লরেন্স ইয়ং, ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট, বলেন, “উষ্ণ আবহাওয়া ও সামাজিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় সংক্রমণও বাড়তে পারে। জুনের শেষ বা জুলাই মাসে সংক্রমণের ঢেউ দেখা যেতে পারে।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, NB.1.8.1, অর্থাৎ নিম্বাস, বর্তমানে বিশ্বের মোট কোভিড সংক্রমণের ১০.৭ শতাংশ দখল করে আছে, যেখানে এক মাস আগেও এই হার ছিল মাত্র ২.৫ শতাংশ।
কীভাবে বিস্তার ঘটাচ্ছেঃ
*গরম ও আর্দ্র পরিবেশেও ভাইরাসটি ছড়াতে সক্ষম।
*ল্যাব পরীক্ষায় দেখা গেছে, এটি পূর্ববর্তী ধরনগুলোর তুলনায় মানব কোষে আরও দক্ষতার সঙ্গে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
*যদিও এটি আরও মারাত্মক নয়, তবু ঝুঁকিপূর্ণদের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে।
২০২৫ সালের মে মাসেই কোভিডে যুক্তরাজ্যে ৩০০-র বেশি মৃত্যু হয়েছে। তবে বর্তমান ওমিক্রন-উপযোগী কোভিড টিকা নিম্বাসের বিরুদ্ধেও কার্যকর হবে বলে আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা।
ডা. গায়ত্রী আমিরথলিঙ্গম, ইউকে এইচএসএ-র উপ-পরিচালক, জানিয়েছেন তারা নিম্বাসের ওপর কড়া নজর রাখছেন এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট প্রকাশ করছেন।
কারা বিনামূল্যে টিকা পাবেনঃ
*৭৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি।
*কেয়ার হোমে বসবাসকারী।
*৬ মাস বয়সী বা তার বেশি যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল।
(যেমন: অঙ্গপ্রতিস্থাপনপ্রাপ্ত, এইচআইভি রোগী, ক্যানসারের চিকিৎসাধীন ও জিনগত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা)
UKHSA-এর তথ্যে দেখা গেছে, যারা গত বসন্তে কোভিডের বুস্টার টিকা নিয়েছেন, তারা ৪৫ শতাংশ কম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অপ্রতিষেধকপ্রাপ্তদের তুলনায়।
সরকার ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আহ্বান জানাচ্ছেন — যারা টিকার উপযোগী, তারা যেন অবিলম্বে টিকা গ্রহণ করেন। এতে নিজেকে ও অন্যদের রক্ষা করা সম্ভব।
সূত্রঃ ডেইলি মেইল
এম.কে
০৯ জুন ২০২৫