যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নরোভাইরাসের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। তারা ধারনা করেন এই ভাইরাস “অগ্নিকাণ্ডের মতো দ্রুত” ছড়িয়ে পড়তে পারে।
লন্ডনের অন্যতম বৃহত্তম হাসপাতাল সেন্ট জর্জস হাসপাতাল, টুটিং-এ নরোভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে তিনটি ওয়ার্ড বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
নতুন রোগীদের এই ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু ওয়ার্ড এবং বেডে রোগী ভর্তি ও স্থানান্তর বন্ধ রেখেছে।
এনএইচএস ইংল্যান্ডের নতুন তথ্য অনুসারে, অত্যন্ত সংক্রামক এই ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জনগণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে একটি সহজ অভ্যাস মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রফেসর আর্লিন ওয়েলম্যান এমবিই, সেন্ট জর্জস, এপসোম এবং সেন্ট হেলিয়ার হাসপাতালের গ্রুপ চিফ নার্স, বলেন:
“নরোভাইরাস একবার হাসপাতালে প্রবেশ করলে, এটি দাবানলের মতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং রোগীদের আরও অসুস্থ করে তোলে। আমরা এর বিস্তার সীমিত করতে যা যা করা সম্ভব, করছি।
“হ্যান্ড স্যানিটাইজার এই ভাইরাস মারতে পারে না। তাই সাবান ও পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের হাসপাতালের শয্যাগুলোকে প্রয়োজনীয় রোগীদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে সহায়তা করবে।”
নরোভাইরাস: কী কী লক্ষণ দেখা যায়?
✅ প্রাথমিক লক্ষণ:
বমি বমি ভাব
বমি
ডায়রিয়া
✅ অন্যান্য লক্ষণ:
উচ্চ জ্বর
মাথাব্যথা
পেট ব্যথা
শরীর ব্যথা
মাঝে মাঝে জ্বর
নরোভাইরাসের উপসর্গ সাধারণত ২-৩ দিন স্থায়ী হয়। তবে রোগী সুস্থ হওয়ার ৪৮-৭২ ঘণ্টা পরেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। তাই এই সময়ের মধ্যে হাসপাতাল বা কেয়ার হোম পরিদর্শন করা, অন্যদের জন্য খাবার প্রস্তুত করা এড়িয়ে চলা উচিত। এই ভাইরাসের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই, তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল পান করা শরীরকে পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা করতে পারে।
হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সেবা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, ইংল্যান্ডের হাসপাতালগুলো রোগীদের ভিড়ে প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে এবং চিকিৎসকেরা শীতকালীন বমির রোগের ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন।
এনএইচএস ইংল্যান্ডের তথ্যানুসারে, গত সপ্তাহে হাসপাতালে শয্যা দখলের হার গড়ে ৯৬% ছিল, যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৯৮,১০১ রোগী ভর্তি ছিল— যা এই শীত মৌসুমে সর্বোচ্চ সংখ্যা।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, “বিলম্বিত ছাড়পত্র (Delayed Discharge) সমস্যার কারণে হাসপাতালের কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে গেছে।”
১৩,৭৭৬টি হাসপাতালের শয্যা প্রতিদিন এমন রোগীদের দখলে ছিল, যারা চিকিৎসার জন্য ফিট হলেও ছাড়পত্র পাচ্ছিলেন না।
এক সপ্তাহ আগেও এই সংখ্যা ১৩,৪২৬ ছিল, যা আরও বেড়েছে।
হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৯৬১ জন প্রতিদিন নরোভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন, যা এক সপ্তাহ আগের তুলনায় ৭% বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রফেসর জুলিয়ান রেডহেড, এনএইচএস ইংল্যান্ডের জাতীয় জরুরি ও তাৎক্ষণিক চিকিৎসা পরিচালক, বলেন:
“শত শত রোগী এখনো অত্যন্ত সংক্রামক এবং বিরক্তিকর নরোভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই রোগের হার ২০২০ সালের পর এই সময়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।”
“শীতকালীন ভাইরাসের চাপ ও হাসপাতাল থেকে রোগী ছাড়ার সমস্যার কারণে হাসপাতালগুলোর শয্যা কার্যত পূর্ণ হয়ে গেছে, যদিও এই চাহিদা সামলাতে আরও শয্যা চালু করা হয়েছে।”
✅ এনএইচএস পরামর্শ দিচ্ছে:
সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা সংক্রান্ত সহায়তার জন্য NHS 111 (অনলাইন বা ফোন) ব্যবহার করুন।
শুধুমাত্র জরুরি ও জীবন-সংকটপূর্ণ অবস্থায় ৯৯৯ নম্বরে কল করুন বা A&E (Accident & Emergency) ওয়ার্ডে যান।
✅ আমির ডগলাস, যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থার মহামারী বিশেষজ্ঞ, বলেন:
“নরোভাইরাস সংক্রমণের হার স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি, এবং হাসপাতালগুলোতে এর প্রাদুর্ভাব বাড়ছে।”
“যদি আপনি ডায়রিয়া ও বমির সমস্যায় ভুগে থাকেন, তবে দয়া করে এটি অন্যদের মধ্যে ছড়ানোর ঝুঁকি কমানোর ব্যবস্থা নিন। হাসপাতাল ও কেয়ার হোমে রোগী দেখতে যাওয়া এড়িয়ে চলুন।”
✅ রয়্যাল কলেজ অফ ইমার্জেন্সি মেডিসিনের সভাপতি ডা. অ্যাড্রিয়ান বয়েল সতর্ক করে বলেন;
“বর্তমানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। শয্যা খালি না থাকা মানেই হাসপাতাল রোগীতে পরিপূর্ণ। তাই পুরো হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম এখন ব্যাহত হচ্ছে।”
সূত্রঃ দ্য স্যান্ডার্ড
এম.কে
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫