নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা থেকে কাজ বা পড়াশোনার উদ্দেশ্যে যুক্তরাজ্যে আবেদনকারীদের ওপর হোম অফিস কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে, কারণ কর্মকর্তাদের সন্দেহ—এই তিন দেশের নাগরিকরাই সবচেয়ে বেশি সময়সীমা পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করেন এবং পরে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন।
সরকার ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির (NCA) সঙ্গে যৌথভাবে এমন একটি মডেল তৈরি করছে, যার মাধ্যমে এই তিন দেশের আবেদনকারীদের প্রোফাইল বিশ্লেষণ করে আশ্রয় চাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের শনাক্ত করা যাবে।
এই প্রকল্প সফল হবে কি না, তা নির্ভর করবে এই মডেলগুলোর কার্যকারিতা এবং তারা যে গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করছে তার উপর অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মতামতের উপর।
গত বছর প্রায় ১০,০০০ আশ্রয়প্রার্থী যারা বৈধভাবে কাজ বা পড়াশোনার ভিসায় যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন, তারা কোনো এক সময়ে করদাতাদের অর্থে পরিচালিত আবাসনে (যেমন: হোটেলে) বসবাস করছিলেন।
হোম অফিসের প্রকাশিত মার্চ মাসের তথ্য অনুযায়ী, যে সকল আশ্রয়প্রার্থী শুরুতে ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছিলেন এবং পরে সরকারি আবাসনে চলে যান, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিলেন পাকিস্তান, নাইজেরিয়া ও শ্রীলঙ্কার নাগরিক।
দ্য গার্ডিয়ান শনিবার প্রকাশ করে সরকার এমন পরিকল্পনা করছে যাতে ছাত্র ভিসাধারীদের মাধ্যমে আশ্রয় আবেদনকারীর সংখ্যা কমানো যায়।
ভিসা আবেদনের সময় জমা দেওয়া ব্যাংক স্টেটমেন্টগুলোও আশ্রয় প্রদানযোগ্যতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হবে কর্মকর্তাদের।
দ্য টাইমস জানিয়েছে, হোম অফিস এমন একটি গোয়েন্দা কাঠামো গড়ে তুলছে যাতে কেসওয়ার্কাররা সহজেই চিনতে পারেন—কারা কর্ম বা ছাত্র ভিসাকে ব্যবহার করে আশ্রয় প্রার্থনার ফাঁকফোকর খোঁজার চেষ্টা করছেন। পাকিস্তানি, নাইজেরিয়ান ও শ্রীলঙ্কান ভিসাধারীদের সবচেয়ে বেশি আশ্রয়প্রার্থীতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনাময় হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সরকার এমন একটি মডেল গড়ে তুলছে যাতে ওই প্রোফাইলের সঙ্গে মিলে যাওয়া আবেদনকারীর ভিসা সরাসরি বাতিল করা যায়।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইগ্রেশন অবজারভেটরির পরিচালক ম্যাডেলিন সাম্পশন বলেন, এই মডেল আদৌ কার্যকর হবে কি না তা বলা কঠিন।
মূল প্রশ্ন হলো—তাদের হাতে এমন তথ্য আছে কি না, যা দিয়ে নির্ভুলভাবে নির্ধারণ করা যায় কে কে যুক্তরাজ্যে এসে আশ্রয় চাইবেন। কারণ এটা যথেষ্ট কঠিন কাজ।
তিনি আরও বলেন, “এটা কার্যকর হবে কি না, তা নির্ভর করবে—তারা আদৌ যথেষ্ট স্পষ্ট ও দৃশ্যমান কোনো প্যাটার্ন শনাক্ত করতে পারেন কি না, নাকি এটা অনেকটা নির্বিচারে কিছু সিদ্ধান্তে গিয়ে ঠেকবে। বাইরে থেকে দেখে এটা বলা কঠিন।
আমি এমন কিছু পরিস্থিতির কথা ভাবতে পারি, যেখানে এর প্রভাব অনেক বড় হতে পারে। আবার এমনটাও হতে পারে যে এটি খুব অল্পসংখ্যক লোককে প্রভাবিত করবে।”
সরকারের এই পরিকল্পনা বৈষম্যের অভিযোগে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে কি না—জানতে চাইলে সাম্পশন বলেন, “আমি আইনজীবী নই, তবে কর্ম ও ছাত্র ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকার বহির্বিশ্ব থেকে আগতদের ব্যাপারে যথেষ্ট স্বাধীনতা ভোগ করে।
যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইনি পদক্ষেপের সুযোগ আছে, তবুও সাধারণভাবে সরকার নানা ভিত্তিতে ভিসা প্রদানে বৈষম্য করার আইনি স্বাধীনতা রাখে।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৫ মে ২০২৫