ইটালির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মোনফালকোনে শহরের একটি পার্কিং লটে জুম্মার নামাজ পড়েন স্থানীয় মুসলিমরা৷ গাদাগাদি করে নামাজ পড়তে গিয়ে নানা অসুবিধার সম্মুখীন তারা৷ গত বছর থেকে তারা মূলত এখানে নামাজ পড়া শুরু করেন৷ কারণ সেসময় কর্তৃপক্ষ শহরে অবস্থিত দুটি মুসলিম সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নামাজ পড়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়৷
উল্লেখ্য ২০১৬ সাল থেকে শহরের ক্ষমতায় রয়েছে ডানপন্থি লিগ পার্টি৷ সেই সময় থেকে মেয়রের দায়িত্বে আছেন আনা মারিয়া সিসিন্ট। শহরের ৩০ হাজার বাসিন্দার এক তৃতীয়াংশই অভিবাসী যাদের অনেকে কয়েক দশক ধরে ইটালিতে বাস করছেন৷
শহরটির অভিবাসীদের একটি বড় অংশই বাংলাদেশি যাদের অধিকাংশই মুসলিম৷ ইটালির এই শহরটি ইউরোপের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য সুপিরিচিত৷ যে কারণে এই শহরটিতে বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, যে জায়গাটিতে এখন মুসলিম পুরুষেরা নামাজ পড়েন সেটি রেজাউল হক নামে এক বাংলাদেশি অভিবাসীর মালিকানাধীন৷ রেজাউল হক অভিযোগ জানিয়ে বলেন, ‘‘নামাজের জায়গা দেওয়ায় শহর কর্তৃপক্ষ তাকে হয়রানি করছে৷’’
স্থানীয় মেয়র অবশ্য হয়রানির বিষয়ে রেজাউল হকের এই অভিযোগ অস্বীকার করেন৷ মোনফালকোনের মেয়র সিসিন্ট বলেন, ইটালির নগর উন্নয়ন পরিকল্পনায় উপাসনালয়ের স্থাপনা তৈরিতে সীমাবদ্ধতা রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘একজন মেয়র হিসেবে আমি কারো বিপক্ষে নই৷ কোনাে ব্যক্তির বিরুদ্ধে গিয়ে আমি আমার সময়ও নষ্ট করতে চাই না৷ আবার এখানে আমাকে আইনের বাস্তবায়ন করতে হবে৷’’
জানা গেছে, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শহরটির স্থানীয় প্রশাসনিক আদালত মেয়র এবং মুসলিমদের মধ্যস্ততার জন্য এগিয়ে এসেছে৷
স্থানীয় মুসলিমদের উদ্ধৃত করে ২ মেনিফেস্টো পত্রিকার খবরে বলা হয়, নামাজ পড়ার বিষয়ে মুসলিমেরা বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছিল৷ যেমন কয়েকবার নামাজের জামাত আয়োজন করা যেন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ভেতরে অতিরিক্ত লোকসমাগম না হয়৷
কিন্তু প্রসাশন এই প্রস্তাবনায় সাড়া দেয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় মুসলিমদের৷ এরপর রমজান মাসে তারা শহরের কেন্দ্রে খোলা মাঠে নামাজ আয়োজন করতে শুরু করে বলে জানা গেছে৷
এ বিষয়ে ২ মেনিফেস্টো পত্রিকাকে মেয়র সিসিন্ট জানান, তার মনে হয়েছে তিনি এমন এক ধরনের আচরণের সাক্ষি হচ্ছেন ‘যেটি মারাত্মক ঔদ্ধত্যপূর্ণ৷’ মেয়রের মতে, শহরের কেন্দ্রে নামাজ আয়োজনের এই বিষয়টি প্রদর্শন করছে যে, তারা এমন একটি কাজ করছে যা স্থানীয় আইন সমর্থন করে না৷
উল্লেখ্য যে, ক্যাথলিক সংখ্যাগরিষ্ঠের ইটালিতে ১৩টি ধর্মের দাপ্তরিক মর্যাদা রয়েছে৷ এই তালিকায় ইসলাম ধর্ম নেই৷ আর এ কারণে মসজিদ নির্মাণ করা সেখানে কঠিন৷ দেশটির মুসলিমদের প্রধান সংগঠনের একটি ইটালিয়ান ইসলামিক রিলিজিয়াস কমিউনিটি জানায়, ইটালিতে রাষ্ট্রিয়ভাবে স্বীকৃত মসজিদের সংখ্যা ১০টিরও কম৷
সূত্রঃ এএফপি
এম.কে
১৭ মে ২০২৪