দুর্গাপূজার আগে প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশ আমদানির চিঠি পাঠিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। পূজার সময়ে ইলিশ খাওয়ার ঐতিহ্য থাকলেও বাংলাদেশ থেকে এখনও অনুমতি মেলেনি। ফলে এ বছর পশ্চিমবঙ্গের বাজারে গুজরাটের ভারুচ এলাকার ইলিশই প্রধান ভরসা হয়ে উঠেছে।
গত দেড় মাসে প্রায় চার হাজার টন ইলিশ গুজরাট থেকে এসেছে পশ্চিমবঙ্গে। মাছ ব্যবসায়ীদের দাবি, এর পরিমাণ আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। তবে এই ইলিশের স্বাদ-গন্ধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ক্রেতা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী সবাই। কলকাতার সিনিয়র সাংবাদিক ও খাবারবিষয়ক লেখক সুরবেক বিশ্বাস বলেন, “পদ্মার মোহময়ী ইলিশ কোথায় আর গুজরাটের ইলিশ কোথায়! ব্যাপারটা অনেকটা উত্তম কুমারের সঙ্গে এখনকার নায়কদের তুলনার মতো।”
তিনি জানান, পদ্মা ও মেঘনার ইলিশের স্বাদ মিষ্টি এবং গন্ধ অনন্য। রান্নার যেকোনো পদ্ধতিতেই সেই স্বাদ-গন্ধ অটুট থাকে। কিন্তু গুজরাট বা ভারুচের ইলিশে স্বাদের কিছুটা মিল থাকলেও বিশেষ গন্ধ নেই। মিয়ানমারের ইরাবতী নদীর ইলিশও একই ধরনের।
বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানি বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাজারে নিশ্চিন্দপুর ও আশপাশের এলাকার ইলিশ এখন তুলনামূলক জনপ্রিয়। সুরবেক বিশ্বাসের মতে, এ অঞ্চলের ইলিশ স্বাদে-গন্ধে অনেক ভালো। এছাড়া ওড়িশার বুড়ি বালাম নদীর মোহনা থেকেও বড় আকৃতির সুস্বাদু ইলিশ ওঠে। তবে এ বছর সেখানকার যোগান কম বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে বাজারে জাটকার দৌরাত্ম্য বেড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। হাওড়া পাইকারি মাছ বাজারের ব্যবসায়ী বিনোদ জয়সওয়াল জানান, নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ডায়মন্ড হারবার ও রায়দীঘীর আড়ৎ থেকে প্রচুর জাটকা বিক্রি হচ্ছে। দেড়শ থেকে দুইশ গ্রামের ছোট ইলিশে বাজার ভরে গেছে। প্রশাসনের কোনো নজরদারি না থাকায় মাছের জাত ধ্বংসের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরাই।
বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানির অনুমতি না আসা পর্যন্ত পূজার বাজারে গুজরাটের ইলিশই প্রাধান্য পাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ইলিশপ্রেমীরা অপেক্ষায় আছেন—পদ্মার মোহময়ী ইলিশ আবার কবে পশ্চিমবঙ্গের পাতে ফিরবে।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫