আট বছর লড়াইয়ের পর এসেক্সের বনাঞ্চলকে গৃহায়ন পরিকল্পনা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাউন্সিল এসেক্স কাউন্সিল।
কোলচেস্টারের মিডলউইক রেঞ্জস, নাইটিঙ্গেল ও অ্যাসিড গ্রাসল্যান্ডের বনাঞ্চল জাতীয় পরিবেশের গুরুত্বের স্বীকৃতি পেয়েছে।
যুক্তরাজ্যের একটি কাউন্সিল ১,০০০টি নতুন বাড়ির জন্য নির্ধারিত স্থান থেকে যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় সেরা বনাঞ্চল নাইটিঙ্গেলকে বসবাসের জন্য ব্যবহার করার পরিকল্পনা হতে বাদ দিয়েছে। যা স্থানীয় আন্দোলনকারী ও পরিবেশবাদীদের জন্য বড় এক বিজয়।
কোলচেস্টারের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত মিডলউইক রেঞ্জস, যা পূর্বে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ফায়ারিং রেঞ্জ ছিল। সেটিকেও শহরের কাউন্সিলের গৃহায়ন পরিকল্পনা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কাউন্সিল সদস্যরা ক্রমবর্ধমান পরিবেশগত প্রমাণের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যা প্রমাণ করে যে এটি প্রকৃতির জন্য জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মিডলউইক ছয়টি ক্যাটাগরিতে বিশেষ বৈজ্ঞানিক আগ্রহের স্থান (SSSI) হওয়ার মানদণ্ড পূরণ করে বা অতিক্রম করে। কারণ এখানে রয়েছে বিপন্ন নাইটিঙ্গেল, বিরল বারবাসটেল বাদুড়, নানা প্রজাতির অমেরুদণ্ডী প্রাণী, বিরল অ্যাসিড গ্রাসল্যান্ড, মোমখাপ ফাঙ্গি (waxcap fungi) ও শতবর্ষী গাছপালা।
তবে ৭৬ হেক্টর (১৮৮ একর) আয়তনের এই স্থানটি এখনও SSSI স্বীকৃতি পায়নি। ফলে স্থানীয় আন্দোলনকারীদেরকে এর প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করতে আট বছর ধরে লড়াই করতে হয়েছে, যাতে এটি কংক্রিটে ঢেকে না যায়। এটি স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্যও জনপ্রিয় এক প্রাকৃতিক স্থান।
এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এলো, যখন কিয়ার স্টারমার ও র্যাচেল রিভস উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত করার জন্য নিউট, বাদুড় ও ব্যাঙকে দোষারোপ করেছেন। অন্যদিকে নতুন আবাসন, সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রকৃতি-সমৃদ্ধ নতুন এলাকা তৈরি করার ধারণা (mitigation) নিয়ে আলোচনা চলছে।
প্রাথমিকভাবে কাউন্সিল মিডলউইকে ১,০০০টি বাড়ি নির্মাণের জন্য অনুমোদন দিয়েছিল, তবে ২০১৭ সালের একটি পরিবেশগত প্রতিবেদনে দেখা যায় যে এটি বিরল অ্যাসিড গ্রাসল্যান্ড সমৃদ্ধ। ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই এলাকায় কোনো কৃষিকাজ হয়নি এবং এসেক্সের অবশিষ্ট অ্যাসিড গ্রাসল্যান্ডের ১০% এখানেই অবস্থিত।
সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, এখানে বিরল অমেরুদণ্ডী প্রাণী, বারবাসটেল বাদুড় এবং ২১ প্রজাতির মোমখাপ ফাঙ্গি রয়েছে। উল্লেখ্য, কোনো স্থানকে শুধুমাত্র মোমখাপ ফাঙ্গির বৈচিত্র্যের জন্য SSSI ঘোষণার জন্য কমপক্ষে ১৯ প্রজাতি থাকা প্রয়োজন।
সরকার-নিযুক্ত সংস্থা ন্যাচারাল ইংল্যান্ডসহ একাধিক সংস্থার বিশেষজ্ঞরা মিডলউইককে গৃহায়ন পরিকল্পনা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
কাউন্সিলর আন্দ্রেয়া লাক্সফোর্ড ভন বলেন,
“সর্বশেষ প্রমাণের ভিত্তিতে, আমরা মনে করি মিডলউইককে স্থানীয় পরিকল্পনা থেকে বাদ দেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত। আমরা মিডলউইক নিয়ে জনগণের গভীর উদ্বেগ বুঝতে পেরেছি এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা টেকসই উন্নয়ন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার মধ্যে ভারসাম্য রাখছি।”
এই সুপারিশ আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি কাউন্সিল কমিটিতে ভোটের জন্য উপস্থাপিত হবে, এরপর ছয় সপ্তাহের জন্য জনপরামর্শের (public consultation) জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
৩,৫০০ সদস্যের ‘ফ্রেন্ডস অফ মিডলউইক’ সংগঠন, যা এসেক্স ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট, বাগলাইফ, বাটারফ্লাই কনজারভেশন, আরএসপিবি (RSPB) এবং অন্যান্য সংস্থার সমর্থন পাচ্ছে। তারা আশা করছে প্রাক্তন এই সামরিক এলাকা একটি সম্প্রদায়-নিয়ন্ত্রিত প্রকৃতি সংরক্ষণকেন্দ্রে (Community Nature Reserve) পরিণত হবে।
ফ্রেন্ডস অফ মিডলউইকের ডেপুটি চেয়ার মার্টিন পাগ বলেছেন:
“প্রমাণ স্পষ্ট—মিডলউইককে একটি প্রকৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে রক্ষা করাই একমাত্র যৌক্তিক পথ। এটি এমন এক সুযোগ, যা আমাদের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই অনন্য স্থানকে সংরক্ষণ করবে।”
এসেক্স ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্টের সংরক্ষণ পরিচালক ড. জেরেমি ড্যাগলি বলেছেন:
“আমরা এই প্রতিবেদনের সুপারিশকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই এবং কোলচেস্টার কাউন্সিলরদের এই আদর্শ সিদ্ধান্তকে সমর্থন করার আহ্বান জানাই। আশা করি এখন আমরা মিডলউইক রেঞ্জসকে সম্পূর্ণভাবে সংরক্ষণের কাজ শুরু করতে পারব। এটি নিঃসন্দেহে শহরের সবচেয়ে মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ এবং একে প্রকৃতি-সমৃদ্ধ সবুজ স্থান হিসেবে সংরক্ষণ করা উচিত, যেখানে প্রাণী ও মানুষ উভয়ই সমৃদ্ধ হবে।”
বাগলাইফের প্রোগ্রাম ম্যানেজার জেমি রবিন্স বলেছেন:
“বর্তমানে প্রকৃতি সংকট চলছে, যেখানে আমাদের পোকামাকড় দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। তাই আমাদের সেরা বন্যপ্রাণী স্থানগুলিকে সংরক্ষণ করা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি, এটি মিডলউইক রেঞ্জস ও এখানকার বিশেষ প্রজাতিগুলোর জন্য প্রথম পদক্ষেপ।”
ন্যাচারাল ইংল্যান্ডের প্রধান ব্যবস্থাপক জাস্টিন টিলি বলেছেন:
“টেকসই উন্নয়ন এবং প্রকৃতি পুনরুদ্ধার দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। কোলচেস্টার সিটি কাউন্সিলের পরিকল্পনা নীতি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও নতুন আবাসন তৈরির মধ্যে ভারসাম্য আনতে সক্ষম হবে।”
কোলচেস্টার সিটি কাউন্সিলের স্থানীয় পরিকল্পনা কমিটির চেয়ার টিম ইয়ং বলেছেন:
“আমাদের কাছে থাকা প্রমাণ মিডলউইকের অনন্য জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব তুলে ধরছে। এটি শুধুমাত্র মানচিত্রে একটি জমি নয়; এটি আমাদের শহরের পরিচয়, পরিবেশের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের রেখে যাওয়া উত্তরাধিকার।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫