20.2 C
London
June 9, 2025
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

‘পানির দরে’ কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি — সরকারের দাম নির্ধারণ কাগজে-কলমেই

চামড়ার বাজারে নেমেছে ধস। কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে এবছরও বিপাকে পড়েছেন সারা বাংলাদেশের মানুষ। সরকার বড় গরুর চামড়ার মূল্য ১২৫০ টাকা ও ছোট-মাঝারি গরুর চামড়ার দাম ১১৫০ টাকা নির্ধারণ করলেও বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। স্থানীয় বাজারে ‘পানির দরে’ চামড়া বিক্রি হচ্ছে — কোথাও ২০০, কোথাও ৩০০, আবার কোথাও ১৫০ টাকায়।

ফেনীর পরশুরামের সত্যনগর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল খালেক বলেন, “এক লাখ আশি হাজার টাকা দামের গরু দিয়ে কোরবানি দিয়েছি। কিন্তু গরুর চামড়া বিক্রি করেছি মাত্র ২০০ টাকায়।”

চামড়ার এমন অবমূল্যায়নে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা, হতাশ হয়েছেন দুস্থরা। পরশুরামের বক্সমাহমুদ এলাকার সামছুল আলম জানান, “এলাকায় কেউ চামড়া কিনতে না আসায় অনেকে নিকটবর্তী মাদ্রাসায় দান করে দিয়েছেন।” স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, “গরু কিনেছি ৮১ হাজার টাকায়। কিন্তু চামড়া বিক্রি করেছি মাত্র ২৫০ টাকায়।”

তহিদুল ইসলাম নামে এক স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ী জানান, “এবার প্রায় ৪০০ চামড়া কিনেছি। দাম ১০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। এরপর লবণ দিতে হবে, শ্রমিক খরচ, পরিবহন খরচ ধরলে লোকসানই গুনতে হচ্ছে।”

সরকার কোরবানির আগে দাম নির্ধারণ করেছিল—ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত বড় গরুর চামড়া ১২৫০ টাকা এবং মাঝারি ও ছোট গরুর চামড়া ১১৫০ টাকা। কিন্তু এই দাম বাস্তবে কোথাও কার্যকর হয়নি। বাজারে সরকারি নিয়ন্ত্রণের কোনো বাস্তব চিহ্নও নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চামড়া সংগ্রহের পর লবণযুক্ত না হওয়ায় এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কম দামে কিনে ঝুঁকি নিতে চান না। অন্যদিকে, বড় চামড়া ব্যবসায়ীদের ‘সিন্ডিকেট’ এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যও এর পেছনে বড় কারণ।

স্থানীয়দের অনেকে অভিযোগ করছেন, চামড়ার প্রকৃত দাম নির্ধারণ হলেও সরকার তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো কার্যকর তদারকি ছিল না।

৪-বিজিবির (ফেনী) বেটালিয়ান অধিনায়ক লে. কর্নেল মোশারফ হোসেন জানিয়েছেন, “ভারতে কোরবানির পশুর চামড়া পাচার ঠেকাতে সীমান্তে কড়া নজরদারি ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।”

চামড়ার বাজারে এমন ধস নতুন নয়। বছরের পর বছর ধরে একই অবস্থা চললেও সরকারের পক্ষ থেকে নেই দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা। মৌসুমি ব্যবসায়ী, দরিদ্র জনগণ ও এতিমখানাগুলোও চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

সরকারি ঘোষণাকে যদি বাস্তবায়ন না করা হয়, তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায়—এই ঘোষণার উদ্দেশ্য কী? শুধু লোক দেখানো কাগজে-কলমের কিছু সংখ্যা, নাকি বাস্তবে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর সদিচ্ছা?

এম.কে
০৯ জুন ২০২৫

আরো পড়ুন

দুই সদস্যের অপরিচিত একটি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ২৯ মিলিয়ন ডলার পেয়েছেঃ ট্রাম্প

বাংলাদেশে বাড়ছে প্লাস্টিকের ব্যবহার

বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় শাবিপ্রবির ২২৫ গবেষক