TV3 BANGLA
ফিচার

পাসপোর্ট বৈষম্য থেকে মুক্তির পথঃ কেন বিনিয়োগভিত্তিক নাগরিকত্বে ঝুঁকছে বিশ্ব

বিশ্বায়নের এই যুগে সব পাসপোর্ট সমান ক্ষমতাধর নয়—এই বাস্তবতা ক্রমেই উদ্যোক্তা ও পরিবারগুলোর সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। জন্মসূত্রে প্রাপ্ত নাগরিকত্ব অনেকের জন্য সুযোগের দুয়ার খুলে দিলেও, বহু মানুষের ক্ষেত্রে তা অদৃশ্য সীমান্ত ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই বৈষম্যই বিনিয়োগভিত্তিক অভিবাসন বা ‘ইনভেস্টমেন্ট মাইগ্রেশন’-কে দ্রুত জনপ্রিয় করে তুলছে।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাসপোর্ট বৈষম্য আধুনিক বিশ্বের অন্যতম নীরব কিন্তু প্রভাবশালী অসমতা। উন্নত দেশের নাগরিকরা প্রায় বাধাহীনভাবে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ, ব্যবসা ও বিনিয়োগের সুযোগ পেলেও, অনেক দেশের নাগরিকদের প্রতিটি যাত্রা শুরু হয় ভিসা আবেদন, দীর্ঘ অপেক্ষা ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে। এই বাস্তবতা শিক্ষা, পেশা, ব্যবসা সম্প্রসারণ এমনকি ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকেও প্রভাবিত করছে।

উদ্যোক্তাদের জন্য এই বৈষম্যের প্রভাব আরও গভীর। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী বা অংশীদারের সঙ্গে সাক্ষাৎ, নতুন বাজার পর্যবেক্ষণ কিংবা বাণিজ্য সম্মেলনে অংশগ্রহণ—এসব ক্ষেত্রে সময়ই মূল ফ্যাক্টর। শক্তিশালী পাসপোর্টধারী উদ্যোক্তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নিতে পারলেও, ভিসা-নির্ভর উদ্যোক্তারা অনেক সময় সুযোগ হারান শুধুমাত্র প্রশাসনিক বিলম্বের কারণে। এসব হারানো সুযোগ কখনো পরিসংখ্যানে ধরা পড়ে না, কিন্তু বাস্তব ক্ষতি থেকেই যায়।

এই প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগভিত্তিক অভিবাসন কর্মসূচিগুলোকে দেখা হচ্ছে আধুনিক সমাধান হিসেবে। নির্দিষ্ট বিনিয়োগের মাধ্যমে রেসিডেন্সি বা নাগরিকত্ব দেওয়ার এসব কর্মসূচি একসময় কেবল অতি-ধনীদের জন্য সীমিত ছিল। তবে বর্তমানে উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, ডিজিটাল নোমাড ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর মাঝেও এর চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।

দ্বিতীয় নাগরিকত্ব কেবল ভ্রমণ সুবিধার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা ব্যবস্থার সুযোগ, আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং সুবিধা, কর্পোরেট সম্প্রসারণে সহায়তা এবং রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময় নিরাপদ বিকল্প তৈরি করে। অনেকের কাছে এটি জীবনযাত্রার উন্নতির চেয়ে বেশি—একটি কার্যকর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল।

পারিবারিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এর গুরুত্ব বাড়ছে। অভিভাবকেরা সন্তানদের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় নিয়ে দ্বিতীয় নাগরিকত্ব অর্জনে আগ্রহী হচ্ছেন, যাতে তারা বৈশ্বিক শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও বসবাসের ক্ষেত্রে বেশি বিকল্প পায়। ফলে বিনিয়োগভিত্তিক অভিবাসন ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের গণ্ডি ছাড়িয়ে প্রজন্মগত পরিকল্পনায় পরিণত হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ভবিষ্যতে সম্পদের সংজ্ঞা কেবল ব্যাংক ব্যালান্সে সীমাবদ্ধ থাকবে না। কোথায় বসবাস করা যাবে, কোথায় ব্যবসা করা যাবে এবং সংকটের সময় কত দ্রুত নিরাপদ স্থানে যাওয়া সম্ভব—এই স্বাধীনতাগুলোই হয়ে উঠবে নতুন ধরনের মূলধন। সেই বাস্তবতায় একাধিক পাসপোর্ট আর বিলাসিতা নয়, বরং কৌশলগত শক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সূত্রঃ এন্টারপ্রনর

এম.কে

আরো পড়ুন

যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মার্কিন-মুসলিম পরিচালিত এই শহরটি

অনলাইন ডেস্ক

পৃথিবীর তাপ নিয়ন্ত্রণ করবে বৃহদাকার বুদবুদ!

দইয়ের সঙ্গে যেসব খাবার খেতে মানা

অনলাইন ডেস্ক