TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

পাহাড়ে বসতঘরে আগুনঃ যে কারণে আসছে বেনজীর আহমেদের নাম

বান্দরবা‌নের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়‌নের টংগা‌ঝি‌রি এলাকার পূর্ব বেতছড়া পাড়ায় আগু‌নে পু‌ড়ে‌ছে ত্রিপুরা সম্প্রদা‌য়ের ১৭‌টি বসতঘর। গত মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) পাড়ার সবাই যখন বড়‌দি‌নের উৎসব পালন কর‌তে রাত সা‌ড়ে ১২টার দি‌কে পার্শ্ববর্তী টংগা‌ঝি‌রি পাড়ার গির্জায় গি‌য়ে‌ছিল ঠিক ওই মূহূ‌র্তে পাড়া‌টি আগু‌নে পু‌ড়ি‌য়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। আর এ বসতঘর পোড়ানোয় ঘটনায় বারবার উঠে আস‌ছে সা‌বেক পু‌লিশপ্রধান (আইজি‌পি) বেনজীর আহ‌মে‌দের নাম।

স‌রেজ‌মিন তদ‌ন্তে জানা গে‌ছে, ২০১৬ সা‌লে পু‌লি‌শের সা‌বেক আইজি‌ ত্রিপুরা সম্প্রদা‌য়ের প্রায় ৩০ বছ‌র দখলে থাকা জু‌মের জ‌মি জোরপূর্বক দখ‌লে নেয়। এ সময় তাকে দখল করার কা‌জে সহ‌যো‌গিতা ক‌রেন সা‌বেক আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমান সরই ইউনিয়ন প‌রিষদ (ইউপি) চেয়ারম‌্যান ইদ্রিস কোম্পানি, মৌজাপ্রধান (হেডম‌্যান) ধৈর্য‌্যধন ত্রিপুরা, সা‌বেক জেলা স্বেচ্ছাসেবক লী‌গের সভাপ‌তি মং ওয়াই চিং মারমা। আরও জানা যায়, বসতবাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় মামলা পর ৪ জন আসামি ধরা পড়েছে। তা‌দের ম‌ধ্যে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ৩ জনই কাগজ জাল-জা‌লিয়া‌তির মাধ‌্যমে বেনজীর আহ‌মে‌দের কা‌ছে জায়গাগু‌লো বি‌ক্রি করার সঙ্গে সরাস‌রি সম্পৃক্ত। এ ছাড়া ৪নম্বর আসামি ইব্রা‌হিম বেনজীর আহ‌মে‌দের জায়গাগু‌লো দেখভাল কর‌তেন। এ ৪ জন আসামি ধরা পরার পর আগুন দেওয়ার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে পুলিশের স্বীকার ক‌রে‌ছেন। আর এসব কার‌ণে সা‌বেক পু‌লিশ প্রধান বেনজীর আহ‌মে‌দের সম্পৃক্ততা আরও স্পষ্ট হ‌য়ে‌ছে।

পাহাড়বাসীরা জানান, জমিটি সা‌বেক পু‌লিশ প্রধান (আইজি‌পি) বেনজীর আহ‌মেদ জোর ক‌রে দখ‌লে নি‌য়ে‌ছিল। প‌রে এ জায়গাগু‌লো জেলার সা‌বেক স্বেচ্ছাসেবক লী‌গের সভাপ‌তি মং ওয়াই চিং মারমা দেখভাল কর‌তেন। আর কেয়ার‌টেকার (তত্ত্বাবধায়ক) হি‌সে‌বে ছি‌লেন ইব্রা‌হিম। তারা বলেন, গ্রেফতার আসামিরা আগুন লাগানোর বিষয়টি পু‌লি‌শের কা‌ছে স্বীকার ক‌রে‌ছে বলে শু‌নে‌ছি। তাই আমা‌দের ধারণা, বেনজীর আহ‌মেদ ও সা‌বেক স্বেচ্ছাসেবক লী‌গের সভাপ‌তি মং ওয়াই চিং মারমা, ইউপি চেয়ারম‌্যান ইদ্রিস কোম্পানি ও হেডম‌্যান ধৈর্য‌্যধনও এ ঘটনায় জ‌ড়িত থাক‌বে।’

এ বিষ‌য়ে পাড়ার লিডার পাইংসা প্রু বলেন, ‘আমা‌দের জায়গা জোরপূর্বক সাবেক পু‌লিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ দখল ক‌রে‌ছিল। তিনি পা‌লি‌য়ে যাওয়ার পর আমরা পুনরায় আমা‌দের জায়গা দখ‌লে নিই। প্রায় ৫-৬ মাস আগে আমরা এখা‌নে ১৯‌টি প‌রিবার বসতবা‌ড়ি নির্মাণ ক‌রে বসবাস কর‌তে শুরু ক‌রি। এ সময় এলাকার অনেক গণ্যমান‌্য ব‌্যক্তিরা আমা‌দের পাড়া থে‌কে বিতা‌রিত করার চেষ্টা ক‌রে ও হুম‌কি-ধম‌কি দেয়। তারপরও আমরা জীবনে‌র ঝুঁকি নি‌য়ে এখা‌নে বসবাস ক‌রি।’

এ বিষয়ে পাড়াপ্রধান গঙ্গাম‌নি ত্রিপুরা ব‌লেন, ‘এ ঘটনায় যা‌দের বিরু‌দ্ধে মামলা ক‌রে‌ছি তারা দীর্ঘদিন ধ‌রে চাঁদা দা‌বি ক‌রে আস‌ছিল। নয়‌তো প্রাণনা‌শেরও হুম‌কি দি‌য়ে‌ছিল।’ এ ঘটনায় সা‌বেক পু‌লিশপ্রধান বেনজীর আহ‌মেদসহ এলাকার রাঘববোয়ালরাও জ‌ড়িত ব‌লে ম‌নে কর‌ছেন তি‌নি। এ সময় তি‌নি দোষী‌দের সক‌লের শা‌স্তির দা‌বিও জানান।

সরই ইউনিয়‌নের ডলুছ‌ড়ি মৌজাপ্রধান ধৈর্য‌্যধন ত্রিপুরা ব‌লেন, ‘আমি ২০২১ সা‌লে হেডম‌্যা‌নের দা‌য়িত্ব নি‌য়ে‌ছি। কিন্তু বেনজীর আহ‌মেদ জায়গা কি‌নে‌ছেন আরও ১০ বছর আগে। জায়গা কেনার ব‌্যাপা‌রে আমি সহ‌যো‌গিতা ক‌রি‌নি। এ ঘটনায় আমার নাম জড়ানো উদ্দেশ্যপ্রণো‌দিত।’

এ বিষ‌য়ে জান‌তে চাইলে সরই ইউপি চেয়ারম‌্যান ইদ্রিস কোম্পানি ব‌লেন, ‘আমি বিষয় সম্প‌র্কে অবগত না। ত‌বে সা‌বেক স্বেচ্ছাসেবক লী‌গের সভাপ‌তি মং ওয়াই চিং মারমা আমার ইটভাটা থে‌কে ইট নি‌য়ে‌ছিল রাস্তা করার সময়। তখন শু‌নে‌ছি জায়গা‌টি বেনজীর আহ‌মে‌দের। আমি এর‌ চে‌য়ে বে‌শি কিছু জা‌নি না।’

এদি‌কে, বান্দরবান পু‌লিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ কাউছার বৃহস্পতিবার সকা‌লে অগ্নিকা‌ণ্ডের ঘটনাস্থল প‌রিদর্শন ক‌রে ব‌লেন, ‘বিষয়‌টি‌কে আমরা স‌বোর্চ্চ গুরুত্ব দি‌চ্ছি। ঘটনা‌ ঘটার পর ৭ জন‌কে আসামি ক‌রে এক‌টি মামলা হ‌য়ে‌ছে। রাতভর আমরা এখা‌নে অভিযান পরিচালনা ক‌রে‌ছি। ৪ জন‌কে গ্রেফতার ক‌রে‌ছি। এ ছাড়া ঘটনার পরপরই লামার ইউএনও ওসি ঘটনাস্থল প‌রিদর্শন ক‌রে‌ছেন। ঘটনা‌টি‌কে পু‌লিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দি‌য়ে দেখছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান আছে।’

এম.কে
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

আরো পড়ুন

নেত্রকোনায় প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলা–ভাঙচুর

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শপথবাক্য পরিবর্তন, পুরোনোটি পাঠের নির্দেশ

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের হাঙ্গেরিতে পড়ার সুযোগ, আছে বৃত্তির সুযোগ–সুবিধা