যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েভেট কুপার ঘোষণা দিয়েছেন, ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’কে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় নিষিদ্ধ করা হবে। ৩০ জুন এই সংক্রান্ত খসড়া আদেশ সংসদে উত্থাপন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। প্রস্তাবটি পাস হলে সংগঠনটির সদস্য হওয়া বা তাদের পক্ষে সমর্থন আহ্বান করাও দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে RAF ব্রাইজ নর্টনে প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের কর্মীদের অনুপ্রবেশ ও যুদ্ধবিমানে লাল রঙ ছিটানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ সিদ্ধান্ত এসেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একে “জাতীয় নিরাপত্তার ওপর হুমকি” বলে আখ্যা দেন এবং বলেন, “যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা কাঠামো রক্ষায় সরকার কঠোর অবস্থানে থাকবে।”
তবে কুপারের এই ঘোষণাকে “অবৈধ, বিপজ্জনক এবং স্বেচ্ছাচারী” আখ্যা দিয়েছে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন। তারা বলেছে, “শিক্ষক, নার্স, ছাত্র এবং অভিভাবকদের নিয়ে গঠিত একটি সংগঠনকে সন্ত্রাসী ঘোষণা করার চেষ্টা ব্রিটিশ সরকারের গণতন্ত্রবিরোধী চেহারা প্রকাশ করে।” সংগঠনটি এটিকে ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান ও ফিলিস্তিনি গণহত্যায় যুক্তরাজ্যের জড়িত থাকার সত্যকে আড়াল করার একটি প্রচেষ্টা বলে দাবি করেছে।
কেলিস সলিসিটরস প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের পক্ষে আইনি লড়াই করছে। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কুপারকে এক চিঠিতে জানান, ইতিহাসে কখনোই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারী সংগঠনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় নিষিদ্ধ করা হয়নি। তাই এটা হবে একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
সাবেক লেবার নেতা জেরেমি করবিন এই সিদ্ধান্তকে “স্বৈরতান্ত্রিক” ও “গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর হামলা” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। লেবার পার্টির সিনিয়র ব্যারিস্টার জন হেন্ডি বলেন, “সন্ত্রাসবিরোধী আইন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য নয়।”
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও লিবার্টি এই ঘোষণার আগে যৌথ চিঠিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে। তারা এটিকে মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে “বিপজ্জনক পদক্ষেপ” হিসেবে দেখছে।
ঘোষণার পর লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ারের আশপাশে শত শত মানুষ প্রতিবাদে অংশ নেয়। মেট্রোপলিটন পুলিশ বিক্ষোভে কড়া অবস্থান নেয় এবং ১৩ জনকে গ্রেফতার করে। উপস্থিত একজন বিক্ষোভকারী নাসিয়া বলেন, “যখন ম্যান্ডেলাকে সন্ত্রাসী বলা হয়েছিল, তখনও এই একই অন্যায় আমরা দেখেছিলাম। ইতিহাস যেন আবারও নিজেকে পুনরাবৃত্ত করছে।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২৪ জুন ২০২৫